প্রতীকী ছবি।
দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ সংস্থা জানিয়ে দিল, তাদের অ্যাপের পরিষেবা নিতে হলে, ২০২১-এ চালু করা গোপনীয়তার নতুন শর্তাবলি (প্রাইভেসি আপডেট) মানতেই হবে। বাধ্যতামূলক ভাবে নতুন শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি উঠেছে প্রথম থেকেই। হোয়াটসঅ্যাপ স্পষ্ট বলেছে, এখানে ‘বাধ্যতামূলক’ বলে কিছুই নেই। কোনও গ্রাহকের এতে আপত্তি থাকলে তিনি বার্তা অ্যাপটির পরিষেবা না-নিতেই পারেন। তাঁর অ্যাকাউন্টও মুছে ফেলতে পারেন। এই মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে হাই কোর্টের বিচারপতিও তাঁর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, গোপনীয়তার নতুন শর্ত চাপিয়ে দিয়ে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ ও তৃতীয় পক্ষকে তা দেওয়ার রাস্তা খুলে দিচ্ছে। ব্যক্তিপরিসরের গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে এতে। এমনকি জাতীয় সুরক্ষা বিপন্ন হওয়ার প্রশ্নও জড়িয়ে আছে। কারণ আর্থিক লেনদেনের তথ্য থেকে যাবে হোয়াটসঅ্যাপের কাছে। হোয়াটসঅ্যাপে এনক্রিপটেড অর্থাৎ সঙ্কেতে পরিণত করা বার্তার মোড়কেই থাকে গ্রাহক সম্পর্কে অনেক তথ্য (মেটাডেটা)। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে সেই মেটাডেটা সংগ্রহ নিয়েও আপত্তি উঠেছে। মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুকের মালিকানাধীন সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ স্পষ্ট জানাচ্ছে, নয়া শর্তাবলির মাধ্যমে ফেসবুককে তথ্য জোগানোর বাড়তি কোনও অধিকার পাচ্ছে না হোয়াটসঅ্যাপ। বরং গ্রাহকের তথ্য কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, সে সম্পর্কে তাঁরা তা জানতে পারবেন, অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আগের চেয়ে বাড়বে।
হোয়াটসঅ্যাপ তাদের হলফনামায় আরও যে যুক্তি তুলে ধরেছে তা হল, তাদের নতুন শর্তগুলির উপর হস্তক্ষেপ করলে, গোটা অ্যাপ-দুনিয়াই সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে। কারণ এই শর্তগুলি আদৌ নতুন বা আলাদা নয়। মাইক্রোসফট, গুগল, জ়োম্যাটো, বিগ বাস্কেট, ট্রু কলার কু, রিপাবলিক ওয়ার্লডের মতো বহু বেসরকরি সংস্থার অ্যাপ গ্রাহকের তথ্য জমিয়ে রাখে। একই কাজ করে আরোগ্য সেতু, আইআরসিটিসি, ভীম-এর মতো সরকারি অ্যাপ। তবে শুধু হোয়াটসঅ্যাপের দিকে আঙুল তোলা অর্থহীন। হোয়াটসঅ্যাপ যে ভাবে তাদের নয়া শর্ত মেনে নেওয়ার প্রশ্নে অনুমতি চেয়ে নিচ্ছে, অ্যাপ জগতে অন্যেরা সেটাও করে না। হোয়াটসঅ্যাপে অপছন্দের কোনও শর্ত রয়েছে বলে মনে করলে, এটি ব্যবহার না-করার পূর্ণ স্বাধীনতা গ্রাহকদের রয়েছে।