আবার কি খুলতে চলেছে স্কুল? -ফাইল ছবি।
করোনা পরিস্থিতিতে টানা প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর এ বার ধাপে ধাপে স্কুল খোলার সুপারিশ করলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর বিশেষজ্ঞরা। দেশের সব রাজ্যের জন্যই তাঁদের এই সুপারিশ।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রাথমিক স্তর থেকে এ বার ধাপে ধাপে স্কুল খোলা শুরু হোক। পরের ধাপে খোলা হোক মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি। তার পর উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুল।
দ্য ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আইসিএমআর-এর বিশেষজ্ঞরা দেশের সর্বত্র স্কুল খোলার প্রক্রিয়া শুরুর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ‘ইউনেস্কো’র একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টের নির্যাসটুকু তুলে ধরেছেন। ইউনেস্কোর সেই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের সবক’টি রাজ্যে টানা ৫০০ দিনেরও বেশি স্কুল বন্ধ থাকায় ৩২ কোটিরও বেশি শিশুর যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। তাদের পড়াশোনা এক রকম লাটে উঠে গিয়েছে। কারণ, এই শিশুরা স্কুলে গিয়ে যে নিয়মকানুনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়াশোনা করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের সেই অভ্যাসটা বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
‘রিওপ্নিং অব স্কুলস ডিউরিং কোভিড-১৯ প্যানডেমিক: আ পারসিস্টেন্ট ডায়লেমা’ শীর্ষক নিবন্ধে আইসিএমআর-এর বিশেষজ্ঞরা লিখেছেন, ‘এ দেশের স্কুলস্তরের শিক্ষাব্যবস্থা যে ধরনের তাতে আমাদের হাতে এমন প্রচুর তথ্যপ্রমাণ এসেছে, যা বলছে অতিমারির আগের পর্বে যেমন চলছিল স্কুলগুলির ফের অবিলম্বে সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত। সেই কাজ শুরু হওয়া উচিত ধাপে ধাপে। প্রাথমিক স্তর দিয়ে সেই কাজ এখনই শুরু করে দেওয়া জরুরি।’
দ্য ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এ প্রকাশিত নিবন্ধটি লিখেছেন আইসিএমআর-এর তিন বিশেষজ্ঞ তনু আনন্দ, বলরাম ভার্গব ও সমীরণ পাণ্ডা।
তাঁরা অবশ্য ওই নিবন্ধে এও লিখেছেন, ‘তবে ধাপে ধাপে স্কুল খোলার প্রক্রিয়া শুরুর আগে প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি জেলার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবে তথ্যা জোগাড় করে খতিয়ে দেখতে হবে সেই সব রাজ্যের ওই সব জেলায় দ্বিতীয় তরঙ্গের সংক্রমণের হার কেমন ছিল। সেই সব জেলায় কত জন প্রাপ্তবয়স্কের টিকাকরণ হয়েছে। সেখানকার জনসংখ্যার কত শতাংশ। যাতে বোঝা যায় ওই সব জেলা সম্ভাব্য তৃতীয় তরঙ্গ রুখতে কতটা সক্ষম হবে। তারই ভিত্তিতে ধাপে ধাপে সেই সব জেলায় প্রাথমিক স্তর থেকে স্কুল খোলার কাজ শুরু করে দিতে হবে অবিলম্বে।’
আইসিএমআর-এর তিন বিশেষজ্ঞ তাঁদের নিবন্ধে এ-ও জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের মৃদু সংক্রমণের বিপদ প্রাপ্তবয়স্কদের যতটা, সেই বিপদ প্রায় ততটাই ১ থেকে ১৭ বছর বয়সিদেরও। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। তবে সংক্রমিত হওয়ার পরেও তার ভয়াবহ হয়ে ওঠা আর কোভিডে মৃত্যুর নিরিখে কিন্তু ১ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন প্রাপ্তবয়স্করা।
তাই বিশেযজ্ঞরা বলছেন, ধাপে ধাপে স্কুল খোলার প্রক্রিয়া শুরু হলে কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ যদি কখনও আসে, তা হলে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।