বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। ফাইল চিত্র।
গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে ব্যাপক রাজনৈতিক হিংসার সাক্ষী হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে সেই সব হামলায় মারা যান ও ঘরছাড়া হন তাদের বহু কর্মী। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার মতে, মূলত ডায়মন্ড হারবারে তাঁর উপরে হওয়া হামলার পর থেকেই এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা শুরু হয়েছিল বাংলায়। বাংলায় ভোটের পরে যে মহিলারা নির্যাতিতা হয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ‘ডেমোক্রেসি ইন কোমা’ নামে একটি বই লিখেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সোনালি চিতলকর ও তাঁর সঙ্গীরা। আজ দিল্লিতে তারই প্রকাশ অনুষ্ঠানে নড্ডা বলেন, ‘‘নির্বাচন শুরুর আগে আমিই ছিলাম এই ধরনের হিংসার প্রথম শিকার।’’
বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যে তাদের শক্তিবৃদ্ধি আদৌ ভাল ভাবে নেয়নি তৃণমূল। তাই বিজেপি কর্মীদের মনোবল ভাঙতে ধারাবাহিক হিংসার আশ্রয় নেয় শাসক দল। বিষয়টি ওঠে সংসদে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হায়দরাবাদে হওয়া দলীয় কর্মসমিতির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের হিংসা নিয়ে মুখ খোলেন। রাজ্য প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় কেন্দ্র। বিজেপি শিবিরের মতে, পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী হিংসায় তাদের ৫৭ জন কর্মী মারা যান। ঘরছাড়া হন ১৮ হাজার কর্মী। ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ১১টি এবং মহিলাদের যৌন নিগ্রহের ১৪৩টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। সোনালি চিতলকর ও তাঁর সঙ্গীরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে পাঠানো নির্যাতিতাদের বয়ান ও পরবর্তী সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলে তার ভিত্তিতে বইটি লিখেছেন।
আজ দিল্লিতে সেই বইয়ের উদ্বোধন করতে গিয়ে নড্ডা বলেন, ‘‘হিংসার কথা আর কী বলব! রাজ্যে হওয়া রাজনৈতিক হিংসার প্রথম শিকার হলাম আমি।’’
নড্ডার অভিযোগ, সে দিন ডায়মন্ড হারবারে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমার গাড়ি ও পাইলট গাড়ির মধ্যে একটি বাস ইচ্ছাকৃত ভাবে চলে আসে। আমার গাড়ি আলাদা হয়ে গিয়েছে বুঝেই হামলা চালানো হয়। কিন্তু আমার গাড়ি যে বুলেটপ্রুফ, তা সম্ভবত হামলাকারীদের জানা ছিল না। আমার সঙ্গে যদি এমন হয়ে থাকে, তা হলে বোঝাই যাচ্ছে সাধারণ মানুষের অবস্থা কতটা খারাপ।’’
রাজনৈতিক হিংসার বিষয়টি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের নারীরা কতটা অসুরক্ষিত, তা বোঝাতে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য তুলে ধরে নড্ডা বলেন, মহিলাদের উপরে অ্যাসিড হামলার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি মহিলাদের শারীরিক ও যৌন নিগ্রহের সংখ্যাতেও পশ্চিমবঙ্গ উপরের দিকে রয়েছে। পণের কারণে মৃত্যুর ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশে চতুর্থ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প, একশো দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেও সরব হন নড্ডা।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘যে হামলার কথা নড্ডা বলছেন, তাতে তাঁর গায়ে আঁচড়টুকুও পড়েনি। সে দিন তৃণমূলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল রাজ্য জুড়ে। নড্ডা পুলিশকে না জানিয়ে বাইক-বাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। ওই বাইক-বাহিনীর প্ররোচনাতেই দু’দলের মধ্যে সংঘাত বেধেছিল।’’
সুখেন্দুর অভিযোগ, বিজেপির শাসনেই হাথরস-উন্নাওয়ের জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কাজেই তাদের নেতাদের মুখে এমন কথা শোভা পায় না।