মামলার রায় তখনও ঘোষণা হয়নি। জোধপুরে। ছবি: রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার যখন জোধপুর আদালত সলমন খানকে দোষী সাব্যস্ত করছে, তার আগের মুহূর্ত অবধিও সলমন দাবি করে এসেছেন তিনি নির্দোষ। দোষী হওয়ার পরে শাস্তি ঘোষণা হওয়ার আগে তাঁর আইনজীবীরা দাবি করেছেন, সলমন কত দানধ্যান করেন! সেটা ভেবে তাঁকে ছাড় দেওয়া হোক!
সলমন-ঘনিষ্ঠ থেকে শুরু করে আমচি মুম্বই, নায়কের দরিয়া দিলের কথা অস্বীকার করেন না কেউই। কিন্তু একই সঙ্গে চিঙ্কারা থেকে কৃষ্ণসার থেকে গাড়ি-চাপা— সব মামলাতেই সলমন এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও কিন্তু ওঠে বারবারই। চিঙ্কারা-কৃষ্ণসার-গাড়ি-চাপা— কোথাওই এখনও অবধি সলমন দোষ কবুল করা বা ক্ষমা চাওয়ার রাস্তায় হাঁটেননি। বরং এক-এক বার এক-এক রকম কথা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।
কৃষ্ণসার মামলাতেই যেমন। এক বার টিভি সাক্ষাৎকারে সলমন বললেন, গুলি করা তো দূরের কথা! হরিণশাবককে উদ্ধার করে বিস্কুট আর জল খাইয়েছিলেন তিনি! তাঁর দাবি, তিনি এবং তাঁর সহ-তারকারা বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। দেখেন, ঝোপে একটা হরিণশিশু আটকে রয়েছে। তাকে উদ্ধার করে খাইয়েদাইয়ে সলমনই নাকি সুস্থ করে তোলেন আর সে বনে ফিরে যায়! সেই ঘটনাই নাকি পল্লবিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে!
আবার অন্য একটা সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য ভিন্ন। সেখানে তিনি রহস্য করে বলছেন, ‘‘একটা কথাই বলতে পারি, আমি অন্তত হরিণটা মারিনি।’’ তা হলে অন্য কেউ মেরেছিল? তিনি কি অন্য কারও দায় নিচ্ছেন? সলমন চুপ করে হাসেন। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ আর ডিএনএ রিপোর্ট সলমনের বিরুদ্ধেই গিয়েছে। সে কারণেই তিনি দোষী সাব্যস্ত, জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
চিঙ্কারা মামলায় অবশ্য হাইকোর্টে বেকসুর হয়েছেন সলমন। কিন্তু রহস্য সেখানেও। নিম্ন আদালতে সলমন দোষী হয়েছিলেন। সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাঁর গাড়ির চালক। মামলায় পরবর্তী পর্যায়ে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১৬ সালে একেবারে হাইকোর্টে রায় বেরনোর পরে তবে তাঁর ফের দেখা মিলল। সেই চালক হরিশ দুলানি তখন অভিযোগ করেন, প্রথম বার সাক্ষ্য দেওয়ার পরে তাঁর পরিবারকে টানা হুমকি দেওয়া হয়েছে। যে সংস্থায় গাড়ি চালানোর কাজ করতেন, সেখানে তাঁর চাকরি গিয়েছে। হরিশের বক্তব্য, ‘‘আমি পালাইনি। প্রাণের দায়ে অন্যত্র গিয়েছি। পুলিশি নিরাপত্তা পেলে সাক্ষ্য দিতাম। ১৮ বছর আগে যা বলেছিলাম, এখনও তা-ই বলছি।’’
কী সেটা? দুলানির দাবি, চিঙ্কারা হত্যার সময়ে জিপসি গাড়িটা সলমন নিজেই চালাচ্ছিলেন। এবং শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হননি, একটা চিঙ্কারার গলাও কেটে এসেছিলেন তিনি!
মুম্বইয়ে গাড়ি-চাপা মামলায় প্রধান সাক্ষী ছিলেন সলমনের দেহরক্ষী, মুম্বই পুলিশের কনস্টেবল রবীন্দ্র পাটিল। তিনিই এফআইএর দায়ের হওয়ার সময়ে বলেছিলেন, ২০০২-এর সেই রাতে সলমন মদ্যপ ছিলেন এবং সেই অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ফুটপাতে তুলে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: কয়েদি নম্বর ১০৬!
কিন্তু পাটিলের সহকর্মীরা পরে জানান, মামলা শুরু হতেই পাটিলের হাতে প্রচুর টাকা চলে এসেছিল। পাটিল তখন প্রায়ই গরহাজির। পুলিশ পাটিলকে গ্রেফতার করল। কিছু দিন পরে পাটিল মারা গেলেন। সে রাতে সলমনের সঙ্গী গায়ক কামাল খান তো দেশেই ফিরলেন না আর। সলমনের আইনজীবীরাও সওয়াল করলেন, সলমন গাড়ি চালাচ্ছিলেন না, মত্ত ছিলেন না। এমনকী তিনি গাড়িতে ছিলেন না, এমনও বলা হল।
আপাতত সব মামলাই বিচারাধীন। শেষ উত্তর এখনও বাকি।