মেয়ের কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করে উঠেছিল তাঁর। কিন্তু ধর্ষকদের প্রসঙ্গ আসতেই চোয়াল শক্ত করে তিনি বলে ওঠেন, “ধর্ষকদের দেখার জন্য মেয়ে যে জীবিত নেই, এতেই খুশি আমি। তবে মেয়ের ধর্ষকদের যখন চোখের সামনে দেখছি, প্রতি দিনই যেন মৃত্যু হচ্ছে আমার।” দিল্লিতে মহিলাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন নির্ভয়ার মা আশাদেবী। এখন তাঁদের একটাই লক্ষ্য দোষীদের মৃত্যুদণ্ড। সোমবারও সরকার এবং বিচারবিভাগের কাছে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
আশাদেবী বলেন, “সাত বছর ধরে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বিচারের জন্য আবেদনের পর আবেদন করে যাচ্ছি। আর এই যুদ্ধে আমি নিজেই যেন একটা প্রশ্নে পরিণত হয়েছি।” এর পরই আক্ষেপের সুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ২০১২-তেও পরিস্থিতি যা ছিল, এখনও তাই-ই আছে।
২০১২-র ১৬ ডিসেম্বর গণধর্ষণ করে দিল্লিতে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল নির্ভয়াকে। সেই ঘটনায় ছ’জন অভিযুক্তের মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঝুলছে। রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে চার জনই। সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয় এখন সে দিকেই তাকিয়ে নির্ভয়ার পরিবার-সহ গোটা দেশ।
ওই মঞ্চে আশাদেবী বলেন, “এটা বলা খুব সহজ যে ধর্ষণ হয়েছে। কিন্তু সেই পরিবারকে কখনও জিজ্ঞাসা করেছেন তাদের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে!।” এর পরই তাঁর প্রশ্ন, “আমাদের মেয়ে কী দোষ করেছিল? সেই সব মেয়েগুলোই বা কী দোষ করেছিল যাঁদের ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারা হয়েছে? একের পর এক মেয়েদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে আর বিচারের জন্য আমাদের মাথা ঠুকে মরতে হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন? কেন এই সমাজ এবং প্রশাসন কোনও কোনও সমাধান বার করতে পারছে না?”
সমাজব্যবস্থা নিয়ে আশাদেবীর মতো একই সুর শোনা গিয়েছে সর্ব ভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি সুস্মিতা দেবের গলাতেও। তিনি বলেন, “এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। আমাদের সংবিধান বলে পুরুষ-নারী সমান। কিন্তু বাস্তবে সেই চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা।” ধর্ষণ রোখার পাশাপাশি সুবিচারও সুনিশ্চিত হওয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি। আইনি সচেতনতা সমাজের সব স্তরের মহিলাদের কাছে পৌঁছনো উচিত। এমনটাই মনে করেন সুস্মিতা।
বিজেপি সাংসদ রীতা বহুগুণা জোশী আবার বলেন, “অপরাধ রুখতে বিচারব্যবস্থাকে আরও কঠোর করা প্রয়োজন। আপনা দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতি অনুপ্রিয়া পটেল আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিচারের পক্ষেই সওয়াল করেছেন।