ছবি: পিটিআই।
তিনি বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছেন, হিন্দুত্বকে ছাড়েননি। বিজেপি মানেই হিন্দুত্ব নয়। হিন্দুত্ব একটি আলাদা বিষয়। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর ১০০ দিন পূর্ণ করা উপলক্ষে অযোধ্যায় এসে আজ এই কথা বললেন উদ্ধব ঠাকরে।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম অযোধ্যা-সফরে উদ্ধবের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রশ্মি, পুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী আদিত্য এবং কংগ্রেসের মন্ত্রী সুনীল কেদার। রামলালার মন্দিরে পুজো দেন শিবসেনা প্রধান। তার আগে বলেন, ‘‘মরাঠিতে একটা কথা আছে— ফুল নিবেদন করতে না-পারলে একটা পাপড়ি দাও। তাই মন্দির নির্মাণে এক কোটি টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করছি। মহারাষ্ট্র সরকার নয়, এই টাকা দেবে আমাদের ট্রাস্ট।’’ মন্দিরে আরতি করারও কথা ছিল উদ্ধবের। করোনা-আতঙ্কে তা অবশ্য বাতিল হয়েছে।
কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে জোট সরকার গড়ার পরে শিবসেনা হিন্দুত্ব থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে থাকে বিজেপি। আজ সেই অভিযোগই খণ্ডন করে উদ্ধব বলেছেন, বিজেপি মানেই হিন্দুত্ব নয়। এবং মনে করিয়েছেন, তাঁর বাবা বালসাহেব ঠাকরের আমলে রাম জন্মভূমি আন্দোলনকে কী ভাবে সমর্থন জুগিয়েছিল শিবসেনা। এমনকি মহারাষ্ট্র থেকে মন্দিরের জন্য ‘শ্রীরাম’ লেখা ইটও পাঠানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘প্রধানমন্ত্রীর কথা আমার চেয়ে ভাল আর কে জানেন?’
তাঁর ও বিজেপির পথ আলাদা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করলেও উদ্ধব অবশ্য জানিয়েছেন, রামমন্দির তৈরি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের গেরুয়া বসনধারী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘গত কাল যোগীজিকে বলেছি, রামমন্দির বানাবই। উনি যেন মন্দির বানাতে অযোধ্যায় আসা রামভক্তদের একটু জায়গা দেন।
কার্যত উদ্ধবের কথারই প্রতিধ্বনি শিবসেনার মুখপত্রের আজকের সম্পাদকীয়তে। তবে সেখানে বিজেপিকে আক্রমণ অনেকটাই প্রকট। দেবেন্দ্র ফডণবীসের দ্বিতীয় ইনিংসের মুখ্যমন্ত্রিত্বকে খোঁচা দিয়ে সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘যাঁদের সরকার ৮০ ঘণ্টা টিকেছিল, তাঁরা বলেছিলেন, ঠাকরে-জমানা ১০০ ঘণ্টাও স্থায়ী হবে না। কিন্তু ‘মহাবিকাশ আঘাডী’ সরকার শুধু স্থায়ীই হয়নি, নিজের কাজ দিয়ে মানুষের মনে বিশ্বাস তৈরি করে। সেই কাজের অঞ্জলি রামের পায়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রী অযোধ্যায় গিয়েছেন, এ ভাবেই দেখা উচিত।’’
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, আদর্শগত ভাবে আলাদা তিনটি দল— কংগ্রেস, এনসিপি ও শিবসেনার জোট সরকার সংবিধান মেনে কাজ করছে এবং উদ্ধব তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সমর্থন যে-ই দিক, উদ্ধব এবং শিবসেনা ভিতরে-বাইরে একই আছেন। আদর্শগত কোনও বদল হয়নি। রাম এবং হিন্দুত্ব কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নয়। আরএসএস নেতা সুরেশ ‘ভাইয়াজি’ জোশী সম্প্রতি বলেছিলেন, হিন্দু সমাজ ও বিজেপি সমার্থক নয়। কাজেই বিজেপির বিরোধিতা মানে হিন্দু-বিরোধিতা নয়। সেই কথাও মনে করিয়ে শিবসেনা মুখপত্র বলেছে, ‘‘অযোধ্যা সকলের।’’ আর উদ্ধবের সফরসঙ্গী কংগ্রেসের মন্ত্রী সুনীল কেদার বলেন, ‘‘আমার মন্দির দর্শনের সঙ্গে দলের যোগ নেই। মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারলে সবাই পারেন।’’
হিন্দুত্ব-প্রশ্নে মহারাষ্ট্র বিজেপিও ছেড়ে কথা বলেনি উদ্ধবকে। টুইটারে তাদের প্রশ্ন, ‘‘কংগ্রেস নেতারা যে ভাবে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের সমালোচনা করছেন, তা নিয়ে আপনি ও আপনার দল চুপ কেন? কেন মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছে?’’ কংগ্রেস-শাসিত মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারার সৌসরে সম্প্রতি ছত্রপতি শিবাজীর একটি মূর্তি সরিয়ে দেওয়া হয়। তা নিয়েও শিবসেনা কেন সরব হল না, প্রশ্ন তুলেছে মহারাষ্ট্র বিজেপি।