Priyanka Gandhi

প্রিয়ঙ্কা-প্রীতি অ্যানির, তিন মাসে বদলে গেল মেজাজ, ওয়েনাড়ে ফাঁকা মাঠে খেলা হবে, মেনে নিচ্ছে সিপিআই

এ বার রায়বরেলী এবং ওয়েনাড় দু’টি কেন্দ্র থেকেই রাহুল গান্ধী জিতেছেন। তাঁকে একটি কেন্দ্র ছাড়তেই হত। সোমবার কেরলের ওয়েনাড় ছাড়ার ‘হৃদয়বিদারক’ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন রাহুল।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৪ ১০:৪৩
Share:

রাহুল গান্ধী (বাঁ দিকে ) এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

রাহুল গান্ধী ছেড়ে দিচ্ছেন কেরলের ওয়েনাড়। উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলী রেখে দিয়ে বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে ওয়েনাড়ে লড়তে পাঠানোর কথা সোমবার নিজেই ঘোষণা করেছেন রাহুল। অর্থাৎ, ওয়েনাড়ে উপনির্বাচনে লড়তে যাবেন গান্ধী পরিবারের আরও এক সদস্য। রাহুলের বিরুদ্ধে লড়ে ওয়েনাড়ে হেরেছিলেন সিপিআই নেত্রী তথা সাবেক কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী অ্যানি রাজা। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা সম্পর্কে তিনি প্রীতিসূচক কথাই বললেন। গত মার্চে কংগ্রেসের রাহুল সম্পর্কে যে ‘মেজাজ’ ছিল অ্যানির, জুন মাসের মাঝামাঝি দেখা যাচ্ছে তা কার্যত উধাও!

Advertisement

বস্তুত, প্রিয়ঙ্কাকে কংগ্রেস কেরলে প্রার্থী করায় খুশি অ্যানি। কেন? তাঁর কথায়, “পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের যদি সত্যি মর্যাদা রাখতে হয়, তা হলে সংসদে মহিলা প্রতিনিধিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। আমি খুশি যে, ইউডিএফ (কেরলের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট) এক মহিলাকে ওয়েনাড়ে প্রার্থী করেছে।” রাহুলের মতো প্রিয়ঙ্কার বিরুদ্ধেও কি তিনি লড়বেন? জবাবে অ্যানি বলেন, “আমি সদ্য নির্বাচনে পরাস্ত হয়েছি। ওয়েনাড়ে কে প্রার্থী হবেন, আমি না অন্য কেউ, তা দল ঠিক করবে। কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য হিসেবে আমি দলের মধ্যেই যা বলার বলব।”

লোকসভা ভোট ঘোষণার আগেই কেরলে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে দিয়েছিল বামেরা। কংগ্রেস আনুষ্ঠানিক ভাবে রাহুলের নাম ঘোষণা করার আগেই ওয়েনাড় কেন্দ্রের জন্য অ্যানির নাম ঘোষণা করে এলডিএফ (বাম জোট)। তার পর ক্রমাগত ‘চাপ’ বাড়ানো শুরু হয়। অ্যানির পাশে দাঁড়িয়ে সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাট বলেন, “রাহুল গান্ধীকে ঠিক করতে হবে, তিনি ওয়েনাড়ে লড়ে বিজেপির হাত শক্ত করবেন কি না!” কংগ্রেস অবশ্য সে সবে কর্ণপাত না করে রাহুলকেই প্রার্থী করে। রাহুল ২০১৯ সালেও ওয়েনাড় থেকে জিতেছিলেন। এ বারেও তাঁর জিততে কোনও সমস্যা হয়নি। অ্যানি তখন রাহুল তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘রণংদেহি মেজাজ’ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে অ্যানির মেজাজও।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, রাহুল ২০১৯ সালের ভোটে একমাত্র ওয়েনাড় থেকেই জিতেছিলেন। ওয়েনাড়ের পাশাপাশি তিনি দাঁড়িয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের অমেঠি থেকেও। তবে সেখানে তিনি হারেন বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে। সেই ‘দুঃসময়ে’ ওয়েনাড়ই রাহুলের ‘যষ্টি’ ছিল। এ বারে অবশ্য রাহুল আর অমেঠি থেকে দাঁড়ানোর ‘ঝুঁকি’ নেননি। কেরলের ওয়েনাড়ের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশেরই রায়বরেলী থেকে লড়েন তিনি। এবং রেকর্ড ভোটে জেতেন। তথ্য বলছে, মা সনিয়া গান্ধীর চেয়েও বেশি ব্যবধানে রায়বরেলী থেকে জিতেছেন রাহুল। কিন্তু তার পরেই শুরু হয় ওয়েনাড়-জনিত সমস্যা। কোনটি ছেড়ে কোনটি রাখবেন রাহুল, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়। তবে এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত উত্তরপ্রদেশের দিকেই পাল্লা ঝুঁকে থাকে। যেমন নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে নিজের রাজ্য গুজরাতের বরোদা এবং উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে জেতার পরে বারাণসীই রেখে দিয়েছিলেন। ছেড়েছিলেন বরোদা। রাহুলও উত্তরপ্রদেশের আসনটি রেখেছেন। নিজের ছেড়ে-আসা আসনটি দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কাকে। সোমবার ওয়েনাড় ছাড়ার ‘হৃদয়বিদারক’ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন রাহুল। সঙ্গে এ-ও বলেন, “ওয়েনাড় এবং রায়বরেলী দু’জন করে সাংসদ পাবে। আমি ওয়েনাড়ও দেখব। আবার আমার বোন রায়বরেলীও দেখবে।”

‘দুঃসময়ে’ পাশে দাঁড়ানো ওয়েনাড় কেন ছাড়লেন রাহুল, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশে আলোচনা রয়েছে। অন্য অংশের বক্তব্য আবার ভিন্ন। তাদের বক্তব্য, বিজেপির ‘শক্ত জমি’ উত্তরপ্রদেশে যে ভাবে পদ্মশিবির এ বার ধাক্কা খেয়েছে, তাতে সেই রাজ্যের জেতা আসন ছেড়ে আসা রাহুলের পক্ষে মুশকিল। তাই ওয়েনাড় ছেড়ে দেওয়া একপ্রকার অনিবার্যই ছিল।

ওয়েনাড় সিপিআইয়ের ভাগের আসন। সেখানে কে লড়বেন সেই প্রশ্নে দলের সর্বভারতীয় নেতা পল্লব সেনগুপ্ত মঙ্গলবার বলেন, “সোমবার রাতে জানতে পেরেছি রাহুল গান্ধী ওয়েনাড় ছাড়ছেন। এখনও সেখানে ভোট ঘোষণা হয়নি। কে লড়বেন, সেই সিদ্ধান্ত প্রাথমিক ভাবে দলের কেরল রাজ্য কমিটি নেবে। তার পরে আমাদের আলোচনা করতে হবে।” কেরলে আগের বারের মতোই মাত্র একটি আসনে জিতেছে বামেরা। ২০২১ সালের বিধানসভার তুলনায় কমবেশি ১০ শতাংশ ভোট কমেছে তাদের। উল্লেখযোগ্য ভাবে মাথা তুলেছে বিজেপি। সেখানে ত্রিশূর আসনটি জিতেছে তারা। এই প্রেক্ষাপটে সিপিআই নেতারা অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, ওয়েনাড়ের উপনির্বাচনে সেই অর্থে লড়াইয়ের কোনও সুযোগ নেই। এক নেতার কথায়, “ফাঁকা মাঠেই গোল করে যাবে কংগ্রেস। কারণ, লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর বাম কর্মীদের মনোবল এখন তলানিতে। উল্টো দিকে কংগ্রেস উজ্জীবিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement