মহকুমাশাসক নিশা নাপিত শর্মা (বাঁ দিকে)। তাঁকে খুনে অভিযুক্ত স্বামী মণীশ শর্মা। ছবি: সংগৃহীত।
নিজেকে ইমারতি ব্যবসায়ী বলে মহকুমাশাসক নিশা নাপিতের কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন মণীশ শর্মা। বিয়ের বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইট থেকে তাঁদের দু’জনের আলাপ। তার পর পরস্পরের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সেই সময় নিজেকে ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী বলে নিশার কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন মণীশ। শুধু তাই-ই নয়, নিজেকে এক জন স্থপতি বলেও নিশার কাছে দাবি করেছিলেন। তদন্তের পর এমনই জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মহকুমাশাসক নিশাও তাঁর জন্য সঙ্গী খুঁজছিলেন। ফলে সেই সুযোগ নিয়ে পরিচয় ভাঁড়িয়ে নিশাকে নিজের প্রেমের ‘ফাঁদে’ ফেলেন মণীশ। তার পর দু’জনে বিয়েও করেন। নিশা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যাঁকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছেন, আগেও তাঁর বিয়ে হয়েছিল। এক মহিলার সঙ্গে একত্রবাসও করতেন!
তদন্তকারী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মণীশ প্রথম দিকে বাস কন্ডাক্টরের কাজ করতেন। গোয়ালিয়রের থাটিপুর এলাকায় থাকতেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি জবলপুরে চলে এসেছিলেন। ২০১৮ সালে আবার ফিরে যান। তখন বাড়ির লোকেরা তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেই বিয়ে ছ’মাসের মাথায় ভেঙে যায়। স্ত্রীকে বিচ্ছেদ দেন মণীশ। তার পর আবার গোয়ালিয়রে চলে আসেন। সেখানে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে এক মহিলা এবং দুই শিশুকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। প্রতিবেশীদের কাছে ওই মহিলাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিতেন। এর পরই ২০২০ সালে একটি বিয়ের বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইট থেকে নিশার সঙ্গে পরিচয় হয় মণীশের। তার পর তাঁদের আলাপচারিতা আরও বাড়ে। নিজেকে সেই সময় সমৃদ্ধ ইমারতি ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচয় দেন। সেই সময় মণ্ডলায় কর্মরত ছিলেন নিশা। একটি মন্দিরে গিয়ে বিয়ের পর্ব সারেন তাঁরা। বিয়ের পর শাহপুরায় বদলি হন।
পুলিশ জানিয়েছে, গোয়ালিয়রে যে মহিলার সঙ্গে থাকতেন, নিশাকে বিয়ের পর সেই বাড়ি থেকে মহিলাকে তাড়িয়ে দেন মণীশ। তার পর শাহপুরায় গিয়ে নিশার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ব্যবসায় মন্দা চলছে, এই অজুহাত দিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালানো শুরু করেন মণীশ। ক্রমে মোটা টাকা দাবি করতে থাকেন। সেখান থেকেই বিবাদের সূত্রপাত। তার পর সার্ভিস বই, বিমা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁকে ‘নমিনি’ করার জন্য নিশার উপর চাপ দেওয়া শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে সেই বিবাদের জেরেই মহকুমাশাসককে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।