মানব-পাঠাগার অথবা গল্পদাদুর আসর! এ পাঠাগারে বই নয়, হাজির নানা ধরনের মানুষ। যাঁদের জীবনটাই বইয়ের মতো— সুপাঠ্য, শিক্ষামূলক, প্রেরণাদায়ী।
ইউরোপে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর দিল্লিতে হাজির হতে চলেছে এই অভিনব উদ্যোগ। রবিবার কনট প্লেসে উদ্বোধন হচ্ছে এই ‘পাঠাগারের’। সেখানে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক একজন মানুষ তাঁদের জীবনের গল্প বলবেন ‘পাঠক’ বা শ্রোতাদের। অভিজ্ঞতাগুলি হবে অনন্য এবং টাটকা। শোনার পর বক্তার সঙ্গে শ্রোতারা আলাপচারিতা করবেন। প্রয়োজনে প্রশ্ন করে জানতে পারবেন বাড়তি ফুটনোটও।
২০০০ সালে ডেনমার্কের লেখক ও সাংবাদিক রনি আবেরগেল শুরু করেন এই মানব-পাঠাগার। উদ্দেশ্য, যাঁরা পুঁথিগত শিক্ষা নিতে পারছেন না, তাঁদের সামনে বিভিন্ন জীবন্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ব্যবহারিক শিক্ষার নির্যাসটুকু চারিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি, বিনোদন এবং সাহিত্যে যে প্রাচীন বাচিক আঙ্গিকটি রয়েছে, তাকেও ফিরিয়ে আনা।
পাঠাগারের সদস্য হওয়ার জন্য যেমন চাঁদা দিতে হয় এখানেও তেমন এক-এক জন মানব-গ্রন্থের জন্য দিতে হবে অর্থ। বিনিময়ে তাঁরা শোনাবেন তাঁদের গল্প। এক জন কথকের টেবিলে বসতে পারবেন নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রোতা।
গত দেড় দশকে ৭০টি দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মানব-পাঠাগার। এর আয়োজক ডেনমার্কের একটি বেসরকারি সংস্থা (রনি আবেরগেল যাঁর কর্ণধার)-কে আর্থিক পুঁজি জুগিয়েছে সে দেশের সরকারও। এ বার তার শাখা খুলছে ভারতেও। সেই ‘দিল্লি চ্যাপ্টারে’র প্রধান নেহা সিংহ জানাচ্ছেন, ‘‘রবিবার দিল্লিতে যে সব মানব-গ্রন্থকে আনা হচ্ছে তাঁদের ১১টি গোত্রে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠা মাদকাসক্ত, একক মহিলা বিশ্বপর্যটক, ক্যান্সারজয়ী, চা-বিক্রেতা থেকে লেখালেখির জগতে পা রাখা ব্যক্তিত্ব, র্যাগিং-এর শিকার— এমন সব মানুষ শোনাবেন তাঁদের গল্প।’’ প্রাথমিক ভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় ধার্য করা থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনে গল্প শেষ হওয়ার পর কথোপাকথন আরও এগোতে পারে।
সংগঠকেরা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে খোঁজখবর করে, যাচাই করে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া ব্যক্তিত্বদের চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের অভিজ্ঞতার সামাজিক মূল্য রয়েছে কি না দেখা হয় সেটিও। তার পর চূড়ান্ত স্ক্রিনিং হয়। পরীক্ষামূলক ভাবে গত বছর হায়দরাবাদ এবং ইনদওরেও এই মানব-পাঠাগারের আয়োজন করেছিলেন সংগঠকরা। তার পর মুম্বইয়ে। এ বার বড় করে দিল্লিতে বসছে ‘গল্পদাদুর আসর’!