উপসাগরীয় অঞ্চলের ছ’টি দেশে কাজের জন্য যাওয়া ভারতীয়দের মধ্যে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ১৫ জন করে মারা যান। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
উপসাগরীয় অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে গত ৫ বছরে প্রায় ৩৪ হাজার ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার লোকসভায় পরিসংখ্যান দিয়ে এই উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। সেই পরিসংখ্যানে জানা গিয়েছে, ওমান-সৌদি আরব-সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-কাতার-বাহারাইন-কুয়েতের মতো উপসাগরীয় অঞ্চলের ছ’টি দেশে কাজের জন্য যাওয়া ভারতীয়দের মধ্যে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ১৫ জন করে মারা যান।
লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন কংগ্রেস সাংসদ এন উত্তমকুমার রেড্ডির প্রশ্নের জবাবে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন গত কাল জানিয়েছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে কর্মরত ভারতীয়দের মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৯৮৮ জন মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে চলতি বছরেই মারা গিয়েছেন ৪ হাজার ৮২৩ জন। তিনি আরও জানিয়েছেন, বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনাই ঘটেছে সৌদি আরব ও আমিরশাহিতে। হাজার হাজার ভারতীয়ের এই মৃত্যুর কারণ আরও উদ্বেগজনক। বেতন না মেলা, কাজের অত্যধিক চাপ, দেনার দায়, কর্মস্থলে প্রতিকূল পরিস্থিতি— সব মিলিয়ে মানসিক চাপে জর্জরিত হয়েই এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে ‘গাল্ফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’।
বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, মৃত ভারতীয়দের মধ্যে তেলঙ্গানার বাসিন্দা সবচেয়ে বেশি। গত পাঁচ বছরে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বর্তমান তেলঙ্গানার প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ মারা গিয়েছেন। একই দাবি করেছে তেলঙ্গানা সরকারও। রাজ্যের অনাবাসী ভারতীয় বিষয়ক শাখার এক আধিকারিক ই চিত্তিবাবু বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে উপসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের রাজ্যের প্রায় বারোশো মানুষ মারা গিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: উদ্ধবই ৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেস-সেনা-এনসিপি বৈঠক শেষে জানালেন পওয়ার
গাল্ফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পি বসন্ত রেড্ডি বলেন, ‘‘উপসাগরীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ কর্মীই ধারদেনা বা মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে অনুপযুক্ত পরিবেশের ফলেও তাঁদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওয়ার্ক ভিসা দেওয়ার নামে ভুয়ো এজেন্টের খপ্পরে পড়ে সমস্ত টাকাপয়সা খোয়াচ্ছেন ভারতীয়রা।’’
উপসাগরীয় অঞ্চলে কর্মরত ভারতীয়দের মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজার জন মারা গিয়েছেন। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে কাজের অনুপযুক্ত পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। এ নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে শুধুমাত্র গত অক্টোবরেই জমা পড়েছে ১৫ হাজার ৫১টি অভিযোগ। সব গুলিই পাঠিয়েছেন ওই অঞ্চলে কর্মরত ভারতীয়রা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এজেন্টদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন তাঁরা। মুরলীধরন জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা গিয়েছে, কাজ করলেও বেতন পাচ্ছেন না ভারতীয়রা। কখনও আবার শ্রমের বৈধ অধিকার দিতে অস্বীকার করা হচ্ছে। কখনও বা ওই সব দেশে থাকার পারমিট মিলছে না। মিললেও তার পুনর্নবীকরণ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুতে আটক আরও ৫৭ জনকে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ শনিবার
পি বসন্ত রেড্ডি জানিয়েছেন, এ সব ছাড়াও বহু ভারতীয় কর্মীর অভিযোগ, ওভারটাইম করিয়ে নিলেও মজুরি দিচ্ছে না মালিক পক্ষ। অথবা সাপ্তাহিক ছুটি মঞ্জুর করছেন না তাঁরা। তাঁদের দিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ কাজ করিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোগও করেছেন বহু ভারতীয়। কাজ শেষে দেশে ফেরার ব্যাপারেও ভিসা সংক্রান্ত সমস্যায় পড়ছেন কর্মীরা।
এই পরিস্থিতি ঠেকাতে ভারত সরকার কোনও ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ করবে কি না তা নিয়ে যদিও বিদেশ মন্ত্রক কোনও মন্তব্য করেনি।