National News

ভয়ঙ্কর ধস আইজলে, প্রবল বৃষ্টিতে গোটা উত্তর-পূর্ব বিপর্যস্ত, মৃত ৫

গতকাল অর্থাৎ সোমবার থেকেই অসম, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সকাল থেকে বৃষ্টির দাপট আরও বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ২২:৩৯
Share:

মিজোরামের সারোং ভেং-এ ধসে পড়ে যাচ্ছে বাড়ি। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত।

প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত প্রায় গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত। বেনজির ধস নেমেছে মিজোরামের রাজধানী আইজলে। দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মিজোরামের বিভিন্ন এলাকা। অসমের গুয়াহাটির অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ধস নেমেছে মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড়েও। যত ভারী বৃষ্টিই হোক, মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত প্রশাসন— এ বার এমন দাবিই করেছিল অসম সরকার। কিন্তু এক বেলার ভারী বৃষ্টিতেই ভেসে গিয়েছে মন্ত্রী-আমলাদের দেওয়া আশ্বাস। গুয়াহাটির এমন সব এলাকাও আজ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, যেখানে আগে কখনও জল জমেনি। অসম ও মিজোরাম থেকে ইতিমধ্যেই অন্তত ৫ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।

Advertisement

গতকাল অর্থাৎ সোমবার থেকেই অসম, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সকাল থেকে বৃষ্টির দাপট আরও বেড়ে গিয়েছে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী শিলংয়ে হয়েছে ১০৬ মিলিমিটার। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে ত্রিপুরাতেও। আগরতলায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে আজ। আর সকাল থেকে বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী গুয়াহাটির বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭৩ মিলিমিটার পর্যন্ত। গত ২৪ ঘণ্টার হিসেব ধরলে ইতিমধ্যেই ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে গুয়াহাটিতে। আরও চারদিন এমনই বৃষ্টি চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। অসম, মেঘালয়, অরুণাচলে বিভিন্ন নদীর জলস্তর নিমেষে ফুলেফেঁপে উঠেছে। লখিমপুর, ধেমাজি, ডিমা হাসাও, গহপুরে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে।

ধসে বিপর্যস্ত মিজোরামের সড়ক যোগাযোগ । ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত।

Advertisement

গুয়াহাটিতে এ দিন জি এস রোড, গণেশগুড়ি, এবিসি, নারেঙ্গি, পুরোনো ভিআইপি রোড, কছারিবস্তি, লাচিতনগর, শিলপুখুরি, আমবাড়ি, অনিলনগর, নবীননগর, কালাপাহাড়, মালিগাঁও, হাতিগাঁও, ধীরেনপাড়া, ছয়মাইল, বিরুবাড়ি, জু রোড, চাঁদমারি, ভরলু-সহ বিরাট এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কোথাও জল কোমর সমান। কোথাও বুক পর্যন্ত। গুয়াহাটির চিড়িয়াখানার কাছে আর জি বড়ুয়া রোডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। বিদ্যুৎবাহী তার জলে ডুবে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। এক রিক্সাচালক এবং একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। গুয়াহাটির বহু এলাকায় বাড়ির মধ্যে জল ঢুকে গিয়েছে। গত এক বছর ধরে গুয়াহাটি শহরের নালা-নর্দমার পুনর্নির্মাণ, মেরামতি, সাফাই ইত্যাদির কাজ হওয়ার পর প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এ বারের বর্যায় আর জল জমবে না গুয়াহাটি শহরে। কিন্তু বাস্তবটা ঠিক বিপরীত। বোন্দা, কামাখ্যা, মালিগাঁও, নিজরাপার, চাঁদমারিতে ধস নেমেছে। ভেঙে পড়েছে লখরায় কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩০ ফুট দেওয়াল। জেলা প্রশাসন ধস প্রবণ এলাকা থেকে সকলকে সরে আসার অনুরোধ করেছে। খোলা হয়েছে হেল্পলাইন। কাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

আরও পড়ুন: প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে বাংলাদেশে মৃত ৭২

তেজপুরে ব্রহ্মপুত্র প্রায় ৬৩ মিটারে বইছে, খলিসামারিতে জিয়াভরালি নদী বইছে ৭২.৮ মিটার দিয়ে। নিপকো কর্তৃপক্ষ রাঙানদী বাঁধের জল ছাড়ায় উজান অসমে সতর্কবর্তা দেওয়া হয়েছে। গুয়াহাটির জল বাড়ায় বন্ধ ফেরি।

হাবুডুবু গুয়াহাটি। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত।

বিকেল পর্যন্ত আসা খবরে মিজোরামের আটটি জেলা মিলিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৩৭টি বাড়ি পুরো বা আংশিক ভেঙে গিয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পাহাড়ে ধস নামায় এই অবস্থা। সহস্রাধিক পরিবার ঘরছাড়া। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। নিখোঁজ ২ জন, জখম ৬। ৫২টি নৌকা নিখোঁজ। ভেঙেছে অনেক গাড়ি। মিজোরামে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ, টেলিসংযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন। মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড়েও ধস নেমেছে বলে জানা গিয়েছে।

ধস অবশ্য শুধু মিজোরাম, মেঘালয়ে সীমাবদ্ধ নেই। লাগোয়া বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলাতেও আজ ভয়ঙ্কর ধস নেমেছে পাহাড়ে। প্রবল বৃষ্টিতেই এই বিপর্যয় বলে বাংলাদেশের তরফেও জানানো হচ্ছে। কিন্তু দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় যে ভাবে ধস নেমেছে, তাতে ওই অঞ্চল জুড়ে বড়সড় ভূপ্রাকৃতিক সঙ্কটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement