National News

পদ্ম-কাঁটায় টালমাটাল কংগ্রেস, আরও সংশয়ে রাহুলের ভবিষ্যৎ

ভরপুর আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছিলেন শুক্রবার। বলেছিলেন সব বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল ভুল প্রমাণিত হবে। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের উদাহরণটা। কিন্তু কংগ্রেস সহ-সভাপতির আত্মবিশ্বাস বৃথা গেল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ১২:০৫
Share:

দুশ্চিন্তা গভীর হচ্ছে কংগ্রেসে। —ফাইল চিত্র।

ভরপুর আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছিলেন শুক্রবার। বলেছিলেন সব বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল ভুল প্রমাণিত হবে। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের উদাহরণটা। কিন্তু কংগ্রেস সহ-সভাপতির আত্মবিশ্বাস বৃথা গেল। বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল কিছুটা ভুল প্রমাণিত হল ঠিকই, কিন্তু রাহুল গাঁধী যে অর্থে বলেছিলেন, ঠিক তার বিপরীত অর্থে। সব হিসেব ছাপিয়ে উত্তরপ্রদেশে ৩০০ বা তারও বেশি আসন পাওয়ার পথে বিজেপি। শনিবার দুপুর পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই রাহুল গাঁধীর তরফে।

Advertisement

এই প্রথম এত বড় কোনও নির্বাচনে একা রাহুল কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর আগে কংগ্রেস মূলত সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বেই লড়েছে। অসুস্থ সনিয়া দলের শীর্ষ পদ থেকে অব্যাহতি নিতে চাইছেন অনেক দিন ধরেই। রাহুলের উপর ভার দিতে চাইছেন তিনি। কিন্তু রাহুল এখনই সভাপতিত্বে নিজের উত্থান চাইছেন না। সম্প্রতি কংগ্রেস শিবিরে জল্পনা শুরু হয়েছিল, পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন মিটলেই সনিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে সরে দাঁড়াবেন। রাহুল সহ-সভাপতি থেকে সভাপতি হবেন। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, গোয়া এবং মণিপুরের নির্বাচনে রাহুল গাঁধীকে সামনে রেখেই যে ভাবে লড়তে নেমেছিল কংগ্রেস, তার জেরেই এই জল্পনা জোর পেয়েছিল। উত্তরপ্রদেশে সপা-র সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী সমঝোতার লক্ষ্যে রাহুলই প্রথম সক্রিয় হন। তিনিই ছিলেন সে রাজ্যে কংগ্রেসের প্রচারের প্রধান মুখ। নামবেন নামবেন করেও শেষ পর্যন্ত আর প্রচারে নামেননি প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। তাঁর গতিবিধি মূলত কংগ্রেসের ওয়ার রুম এবং অমেঠী-রায়বরেলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র বিজয়রথ রুখে দেওয়ার প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস এবং সেই সাফল্যকে রাহুল গাঁধীর সাফল্য হিসেবে বাখ্যা করে দলের সভাপতিত্বে তাঁর উত্থানের মঞ্চ প্রস্তুত করা হবে।

কাজে এল না জোট, উত্তরপ্রদেশে আরও অন্ধকারে কংগ্রেস। —ফাইল চিত্র।

Advertisement

পঞ্জাবে কংগ্রেসে হাওয়া যে জোরদার, সে কথা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। উত্তরাখণ্ডেও ফের জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন রাহুল। দুই ছোট রাজ্য গোয়া আর মণিপুর নিয়েও কংগ্রেস আশাবাদী ছিল। রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে লড়াই করে উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি এই রাজ্যগুলিতেও যদি কম-বেশি সাফল্য মিলে যায়, তা হলে অনেক মহিমান্বিত ভাবমূর্তি নিয়ে রাহুল গাঁধী কংগ্রেস সভাপতি পদে বসতে পারবেন, এমনই এক তত্ত্ব নিয়ে জোর চর্চা চলছিল এআইসিসি-র অন্দরে। কিন্তু ভোটগণনার গতিপ্রকৃতি বলছে, কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধীর সব হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে শুধু পরাজয় নয়, শোচনীয় ভরাডুবির মুখে সপা-কংগ্রেস জোট। উত্তরাখণ্ডে অপ্রত্যাশিত ধাক্কা। হার শুধু নয়, সে রাজ্যে বিজেপির চেয়ে বহু পিছিয়ে পড়েছে কংগ্রেস। মণিপুরে কংগ্রেসের সাফল্যের ইঙ্গিত মিলছে, তবে আসন কমার আশঙ্কা রয়েছে, বিজেপিরও উত্থান ঘটেছে। তুলনায় গোয়ায় কংগ্রেসের সাফল্য প্রত্যাশার চেয়ে কিয়ৎ বেশি। কিন্তু ক্ষুদ্রতম রাজ্য গোয়ায় কংগ্রেসের সাফল্য কতটা, তা জাতীয় রাজনীতিতে খুব প্রভাব ফেলবে না বলে বিশ্লেষকদের মত। পঞ্জাবে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ এবং লাগোয়া উত্তরাখণ্ডে যে ভয়াবহ ধাক্কা কংগ্রেস খেল, সে ক্ষত শুধু পঞ্জাবকে দিয়ে মেরামত করা সম্ভব নয় বলেও রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।

আরও পড়ুন: বেনজির গেরুয়া ঝড় উত্তরপ্রদেশে, শোচনীয় ভরাডুবির মুখে সপা-কংগ্রেস-বসপা

রাহুল গাঁধী নিজে সামনে দাঁড়িয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই পাঁচ রাজ্যের ভোটে। সাফল্য এলে রাহুলের নামেই জয়ধ্বনি হত। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল নয়াদিল্লির ২৪, আকবর রোডে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের শোচনীয় পরাজয়ে সে প্রস্তুতি তো থেমে গিয়েছেই, রাহুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও এখন ঘোর সংশয় তৈরি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement