উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক। ছবি: পিটিআই
শুক্রবার রাতে রীতিমতো গুলির লড়াইয়ের পরে বিস্ফোরক-সহ গ্রেফতার হওয়া আইএস জঙ্গি মহম্মদ মুস্তাকিম খান ওরফে আবু ইউসুফ খানের উত্তরপ্রদেশের বলরামপুরের বাড়িতে রবিবার তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করল দিল্লি পুলিশ। একটি বিস্ফোরক ভর্তি চামড়ার জ্যাকেট, বিস্ফোরক ভরা বেল্ট ও আইএস-এর পতাকাও মিলেছে। যা থেকে পুলিশের ধারণা, রাজধানীর কোনও জনবহুল এলাকায় বড় মাপের প্রাণঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল আইএস-এর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ এই যুবকের। তবে প্রাথমিক জেরার পরে তাকে ‘লোন উলফ’ বা ‘একক জঙ্গি’ বলেই মনে করছেন পুলিশ-কর্তারা, বড়সড় হামলা চালিয়ে দুনিয়ার নজর কাড়া যার উদ্দেশ্য ছিল।
এ দিন সকালেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বলরামপুরের বাধিয়া বৈশাহি গ্রামে মুস্তাকিমের বাড়ি পৌঁছে যায় দিল্লি পুলিশের একটি দল। তার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে তল্লাশি করা হয়। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পি এস কুশওয়াহা জানিয়েছেন, তার ঘর থেকে একটি চামড়ার জ্যাকেট উদ্ধার হয়েছে, যার গায়ে সেলোটেপ দিয়ে বিস্ফোরক ও বল বিয়ারিং লাগানো ছিল। তা থেকে ইলেক্ট্রিক তার বেরিয়ে ছিল। অন্য একটি নীল-সাদা জ্যাকেটের পকেটে আলাদা ভাবে মেলে কিছু বিস্ফোরক। চারটি পরিথিনের বাক্সে প্রায় ৮ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক, একটি চামড়ার বেল্টে ভরা ৩ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক, বিভিন্ন মাপের লোহার বল ও প্রচুর ইলেট্রিক তার বাড়ির বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে। নিশানা অভ্যাসের কাজে ব্যবহার করা একটি বড় কাঠের ভাঙা বাক্সও পেয়েছে পুলিশ। কয়েক জন প্রতিবেশী এবং স্থানীয় দু’টি সাইকেল সারাইয়ের দোকানদারের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। বল-বিয়ারিং এবং নাট-বোল্টের বিষয়ে তাঁদের প্রশ্ন করা হয়।
শুক্রবার গ্রেফতারের সময়ে মুস্তাকিমের কাছে পাওয়া গিয়েছিল বিস্ফোরক ও নাট-বোল্ট ঠাসা দু’টি প্রেসার কুকার, জনবহুল এলাকায় যা ফাটলে বহু মানুষ হতাহত হতে পারতেন। কিন্তু ৩৬ বছরের মুস্তাকিমের ফোন ঘেঁটে নানা উস্কানিমূলক ধর্মীয় ভিডিয়ো মিললেও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পুলিশ পায়নি।
মুস্তাকিমের বাবা কাফিল আহমেদ সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে অত্যন্ত ভাল ও শান্ত মানুষ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। কারও সঙ্গে চেঁচিয়ে কথা পর্যন্ত সে বলে না। দিল্লিতে ধরা পড়ার পরে তাই বাবা হিসেবে তিনি বিস্মিত। তবে ৩৬ বছরের এই জঙ্গির স্ত্রী আয়েশা যে তার কাজে সন্দিগ্ধ ছিলেন, তা তিনি জানিয়েছেন। আয়েশা বলেন, ‘‘তাকে আমি বারে বারে বলতাম, খারাপ কোনও কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে পোড়ো না।’’ স্বামী যে কথা শোনেনি, সে জন্য আফশোস করছেন এখন আয়েশা।