ছবি: সংগৃহীত।
টানা পঁচাত্তর দিনেরও বেশি চলা অচলাবস্থার অবসানে এ বার জেএনইউয়ের পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করল মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিকেলে এক বিবৃতিতে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের দাবি, বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবি ঘিরে যে জটিলতা তৈরি হওয়ার জন্য পড়ুয়াদের আন্দোলন, ইতিমধ্যেই তার সমাধানসূত্র বেরিয়েছে। তাই তার পরেও পড়ুয়াদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া যুক্তিহীন। আন্দোলনরত পড়ুয়ারা অবশ্য আগে থেকেই বলছেন, বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি এখনও মানা হয়নি। সেই কারণেই আন্দোলন চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার এ দিন ফের অভিযোগ তুলেছেন, শিক্ষক সংগঠন জেএনইউটিএ-র দুই পদাধিকারী কার্যত অসহযোগ নীতি নিয়েছেন। পড়ুয়াদের সিমেস্টারের জন্য নথিভুক্তিতে সাহায্য করা থেকে শুরু করে সোমবার থেকে ক্লাস শুরুর চেষ্টা— কোনও কিছুতেই ওই শিক্ষক সংগঠন এগিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ। এতে শিক্ষকদের চাকরির প্রাথমিক শর্তই লঙ্ঘিত হয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, ক্যাম্পাস দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টার কথাও।
আরও পড়ুন: যোগীর রাজ্যে এক টুকরো ‘শাহিনবাগ’
কিন্তু জেএনইউটিএ-র প্রেসিডেন্ট ডি কে লোবিয়ালের পাল্টা দাবি, ‘‘আমরাও চাই পঠনপাঠন দ্রুত চালু হোক। স্বাভাবিক হোক ক্যাম্পাস। কিন্তু আপাতত পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।’’ তবু তাঁরা নিজেরা অন্তত কাজে ফিরছেন না কেন? লোবিয়ালের যুক্তি, ৫ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে যে ভাবে শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের উপরে হামলা হয়েছে, তা যে ফের হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? সেই কারণে ক্যাম্পাস আগে স্বাভাবিক না হলে তাঁদের কাজে ফেরা কঠিন বলে জানাচ্ছেন তিনি। এক বিবৃতিতে জেএনইউটিএ জানিয়েছে, এ দিন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে বৈঠকেও এই কথা জানিয়ে এসেছে তারা।
বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও মেনে না-নিলেও, কেন্দ্র সম্প্রতি জানিয়েছে, যে ‘চড়া’ সার্ভিস এবং ইউটিলিটি চার্জকে কেন্দ্র করে এত ক্ষোভ, আপাতত তা গুনতে হবে না পড়ুয়াদের। তা মিটিয়ে দেবে ইউজিসি। কিন্তু হস্টেল ফি কমানো নিয়ে কিছু বলা হয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে দারিদ্র সীমার নীচে থাকা পড়ুয়াদের ৫০% ছাড় দেওয়ার। কিন্তু পড়ুয়াদের দাবি, বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি থেকে এক চুলও পিছু হঠবেন না তাঁরা।
কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সিমেস্টারে নথিভুক্তি ঘিরেও। আন্দোলন শুরুর পর থেকে ৭৫ দিন সিমেস্টারে নথিভুক্তিও বয়কটের ডাক দিয়েছিল ছাত্র সংসদ জেএনইউএসইউ। কিন্তু শনিবার তারা জানিয়েছিল, বর্ধিত হস্টেল ফি না-দিলেও, এ বার ১০৮ ও ১২০ টাকা দিয়ে সিমেস্টারে নথিভুক্তি করবেন সব পড়ুয়া। কিন্তু রবিবার ফের নতুন বিবৃতি জারি করে তা থেকে বিরত থাকার ডাক দেওয়া হয়।
অথচ ১৫ জানুয়ারি ওই নথিভুক্তির শেষ দিন। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, তাঁরা নথিভুক্তির পথে পা-বাড়ালেও, বর্ধিত ফি-এর একাংশ আদায়ে চাপ দিতে অসহযোগিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, ইতিমধ্যেই শীতকালীন সিমেস্টারের জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া।