মানবদেহে করোনার টিকা পরীক্ষার পথে ভারত বায়োটেক— ফাইল চিত্র।
প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আরও ছ’টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আপাতত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে তাদের পিছনে ফেলেছে ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এখন ‘ডেডলাইন’ ১৫ অগস্ট। সত্যিই যদি ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিনে করোনার প্রথম টিকা বাজারে আসে, বিশ্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানে তা হবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
ভারত বায়োটেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ এল্লা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের পথে এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি ধাপ এগিয়েছেন তাঁরা। টানা ৪০ দিনের গবেষণায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের (কোভ্যাক্সিন) প্রথম ভার্সনটি তৈরি করেন তাঁরা। সহযোগিতায়, কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান ড্রাগ কন্ট্রোল রিসার্চ’ (আইসিএমআর) এবং তার অধীনস্থ সংস্থা পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’ (এনআইভি)। এর পরে শুরু হয় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্ব।
‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া’ (সিটিআরআই)-র ‘ম্যান্ডেটেড প্রোটোকল’ মেনে প্রাণীদেহের উপর কোভ্যাক্সিনের সফল পরীক্ষার পরে গত সপ্তাহে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর জন্য ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ (সিডিএসসিও)-এর সবুজ সঙ্কেত পান তাঁরা। আরও ছ’টি ভারতীয় সংস্থাও কোভিড ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। নিয়ম মেনে ‘ফেজ ওয়ান’ এবং ‘ফেজ টু’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ভারত বায়োটেক অনুমোদন পেয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-র তরফেও। প্রথম ফেজে ৩৭৫ এবং দ্বিতীয় ফেজে ৭৫০ জন ইচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবীর দেহে টিকার ফলাফল পরীক্ষা করা হবে। আইসিএমআর-এর নির্দেশ মেনে এখন চলছে দেশজুড়ে ঢালাও ক্লিনিক্যাল হিউম্যান ট্রায়ালের প্রস্তুতি। ভারত বায়োটেকের এমডি জানিয়েছেন, সেই ট্রায়ালে সাফল্য মিললেই শুরু হবে টিকার উৎপাদন।
আরও পড়ুন: ফের তুতিকোরিন, আবারও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, কাঠগড়ায় সেই পুলিশকর্মীরা
আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব বলেন, ‘‘দেশের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে বিবিভি১৫২ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মানবদেহে ক্লিনিক্ল্যাল ট্রায়াল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি ৭ জুলাইয়ের আগেই কাজ শুরু করতে হবে।’’ তিনি জানান, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের একটি স্ট্রেন নিয়ে গবেষণাতেই আসে সাফল্যের প্রথম ধাপ। এটি আদতে নভেল করোনাভাইরাসেরই একটি স্ট্রেন। এই আরএনএ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনই মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটায়। হিমাচল প্রদেশের কসৌলীর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’কেও মানবদেহে টিকার ফলাফল পরীক্ষার কাজে যুক্ত করেছে আইসিএমআর।
সার্স-কোভ-২ আরএনএ ভাইরাসের ওই বিশেষ স্ট্রেনটির সন্ধান মেলার পরে দুই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গাঁটছড়া বাঁধে ভারত বায়োটেকের সঙ্গে। উদ্দেশ্য, করোনার টিকা আবিষ্কার। কিন্তু একাধিক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান করোনা টিকা নিয়ে গবেষণার কাজ চালালেও ভারত বায়োটেককে কেন বাছা হল? আইসিএমআর কর্তাদের মূল যুক্তি দু’টি। প্রথমত, এর আগেও তাঁরা কৃষ্ণ এল্লার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন। রোটাভাইরাস এবং এইচ১এন১ ভ্যাকসিন তৈরির সেই কাজের অভিজ্ঞতা খুবই ভাল। দ্বিতীয় কারণ, হায়দরাবাদের জিনোম ভ্যালিতে ভারত বায়োটেকের গবেষণাগার ও কারখানার নিরাপত্তা ও জৈব-সুরক্ষা ব্যবস্থা। ‘বায়ো সেফটি লেভেল-৩’ (বিএসএল-৩) তকমাধারী এই পরিকাঠামো একেবারে আন্তর্জাতিক মানের। প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ে ‘কালচার’ করার জন্য এমন জৈব-সুরক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। সেখানে প্রাণীদেহে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্ব নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন আইসিএমআর-এর গবেষকেরা।
আরও পড়ুন: ‘ট্রোজান হর্স’! বিদ্যুৎক্ষেত্রে চিনা সরঞ্জাম আমদানি নয়
সাধারণ পরিস্থিতিতে কোনও ভ্যাকসিনের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময়সীমা ছ’মাস। মানবদেহে ভ্যাকসিনের প্রভাব পরীক্ষার জন্যেও বেশ কয়েক মাস সময় দিতে হয় বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অনেকেরই মত। কিন্তু করোনার মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়া অতিমারির মোকাবিলায় এতটা সময় খরচ করতে চাইছে না আইসিএমআর। তাই পুরোদস্তুর সরকারি আনুকূল্য পেলেও ‘স্বাধীনতা দিবসের শর্তপূরণ’ সম্ভব হবে কি না, সেই দিকেই তাকিয়ে দেশ।