সত্যিই অভিনব। আমাদের দেশে চাষিদের একটা বড় সমস্যা হল শস্য মজুদ করে রাখা।
আবহাওয়া কখনও খুব আর্দ্র তো কখনও আবার দারুণ গরম। এই পরিস্থিতিতে শস্য বেশি দিন মজুদ করে রাখাটা মুশকিলের। পচন ধরে যায়। তার উপর ইঁদুরের উত্পাত তো রয়েছেই।
এমন অবস্থায় কী ভাবে কম খরচে শস্য মজুদ করে রাখা যায় দীর্ঘদিন? তার একটা অভিনব উপায় বাতলেছেন রোহিত পটেল।
২৩ বছরের এই তরুণ মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়ার বসিন্দা। পেঁয়াজ চাষ করেন তিনি। প্রতি বছর পেঁয়াজের যা ফলন হয়, তার চেয়ে অনেক কম পেঁয়াজ তিনি বাজারে বেচতে পারেন। কারণ ফলনের অনেকটাই নষ্ট হয়ে যেত।
এই অবস্থায় কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করাও অনেক খরচ সাপেক্ষ। এই সমস্যা সমাধানে নিজেই মাথা খাটিয়ে অভিনব উপায় বার করেছেন তিনি। কী সেই উপায়?
রোহিত জানিয়েছেন, যত পরিমাণ পেঁয়াজের ফলন তাঁর জমিতে হয়, তার বেশিরভাগটাই ৬০০ বর্গ ফুটের একটি ঘরে সংগ্রহ করে রাখা হয়। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ পেঁয়াজের ফলন হয়। কিন্তু সে সময় পেঁয়াজের খুব ভাল দাম মেলে না।
প্রতি কেজি পেঁয়াজ মাত্র ২-৩ টাকায় বেচতে হয় তাঁকে। অথচ কিছুদিন সংগ্রহে রেখে দিয়ে যদি সেটা বর্ষায় বিক্রি করা যায়, তা হলে এক কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। এতে লাভও অনেক বেশি হয়।
সে জন্য তিনি তাঁর ৬০০ বর্গ ফুটের ঘরে মাত্র ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে দেশি পদ্ধতির কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করে ফেলেন।
এই ঘরে কোনও জানলা রাখেননি রোহিত। একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে আট ইঞ্চির ইটের দেওয়াল বানান। তার উপর লোহার তারজালি লাগিয়ে ফেলেন।
এ বার এই তারজালির উপর সমস্ত পেঁয়াজগুলো ছড়িয়ে দেন। নির্দিষ্ট দূরত্বে পুরো ঘর জুড়েই লাগিয়ে দেন মোটা পাইপ। যা একেবারে নীচ পর্যন্ত বিস্তৃত। আর পাইপের একেবারে বাইরে লাগিয়ে দেন ফ্যান।
এই পুরো ব্যবস্থাটা একটা কোল্ড স্টোরেজের মতো কাজ করে। ফ্যান চালালেই ঠান্ডা হাওয়া একেবারে নীচ পর্যন্ত প্রবেশ করে। পুরো ঘরটা ঠান্ডা হয়ে যায়। এতে বেশির ভাগ পেঁয়াজই ভাল থাকে।
আগে যেখানে তিন হাজার কুইন্টাল পেঁয়াজ বেচে রোহিত ৯০ হাজার টাকা আয় করতেন, এখন যেমন পরিমাণে অনেক বেশি পেঁয়াজ বেচতে পারছেন, তার উপর স্টোর করে রেখে ঠিক সময়ে বেচতে পারছেন। ফলে তাঁর আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৬ লাখ টাকা।
রোহিতের এই অভিনব উপায় এখন তাঁর আশপাশের চাষিরাও প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন।