ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তামিলনাড়ুর বিদ্যুৎমন্ত্রী ভি সেন্থিল বালাজি। —পিটিআই।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তামিলনা়ড়ুর বিদ্যুৎমন্ত্রী ভি সেন্থিল বালাজি। তাঁকে গ্রেফতার করার পর মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য চেন্নাইয়ের একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, মন্ত্রীর হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। দ্রুত তাঁর বাইপাস সার্জারি করা প্রয়োজন বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবারই বাইপাস সার্জারি করা হবে সেন্থিলের।
সেন্থিলের স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রসঙ্গে ডিএমকে নেতা পিকে শেখর বাবু বলেন, “তিনি (সেন্থিল) এখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। তিনি এখন অচেতন অবস্থায় চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাঁর ইসিজি রিপোর্টে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছে। এটা অত্যাচারের ইঙ্গিত।” সেন্থিলের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তামিলনাড়ুর ক্রীড়ামন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিন বলেন, “আমরা আইনি পথেই বিষয়টির মোকাবিলা করব। ডিএমকে বিজেপির ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবে না।”
মঙ্গলবার সারা দিন ইডি সেন্থিলের দফতর এবং তামিলনাড়ুর কারুরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারির পর নিয়মমাফিক সেন্থিলকে আনা হয়েছিল চেন্নাইয়ের ওমানদুরার সরকারি হাসপাতালে। একটি অ্যাম্বুল্যান্সে বসানো হয়েছিল বালাজিকে। গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করতেই ঘিরে ধরেন ডিএমকে সমর্থকেরা। কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে চলতে থাকে স্লোগান। এমন সময় অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় বালাজিকে। ইডি সূত্রে খবর, বুধবারই বালাজিকে একটি বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে। আদালতে ইডি মন্ত্রীকে নিজেদের হেফাজতে চাইবে। কিন্তু তাঁর এই শারীরিক অবস্থার পর বুধবার সেন্থিলকে আদালতে পেশ করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বুধবার হাসপাতালে সেন্থিলকে দেখতে গিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। ইডির বিরুদ্ধে তোপ দেগে একটি বিবৃতিতে স্ট্যালিন বলেন, “তাঁর বুকে ব্যথা সত্ত্বেও জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাওয়া হয়।” বিদ্যুৎমন্ত্রী তদন্তে সহযোগিতা করবেন, এ কথা জানানোর পরেও তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ডিএমকে-প্রধান। এর পাশাপাশি, বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা (বিজেপি) জানে, বিরোধী দলগুলিকে থামানোর জন্য এটাই ওদের একমাত্র কৌশল।” বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত বলেও অভিহিত করেন স্ট্যালিন। তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি অবশ্য স্ট্যালিনের পুরনো একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনে দেখিয়েছেন, সেন্থিলের বিরুদ্ধে এক সময় দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন স্ট্যালিনও। তখন অবশ্য সেন্থিল জয়ললিতার দল এডিএমকে-র সদস্য। ইডির এই ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, এনসিপির মতো দলগুলি।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট টাকার বিনিময়ে চাকরির একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ এবং ইডিকে তদন্তে অনুমতি দেয়। তার পর মঙ্গলবার সারা দিন ধরে ইডি তামিলনাড়ুর সচিবালয়, বালাজির দফতর এবং কারুরে তাঁর বাসভবনে তল্লাশি চালায়। প্রসঙ্গত, এডিএমকে জমানায় পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন বালাজি। টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বালাজির ঠিকানায় আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা হানা দেন। তার পরেই মঙ্গলবার তাঁর দুয়ারে পৌঁছে গেল ইডিও।