মেয়ের দেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন লক্ষ্মণ। ছবি সৌজন্য টুইটার।
চড়া রোদ। সুনসান রাস্তা। কোলে বছর চারেকের মেয়েকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন সদ্য সন্তান হারানো এক বাবা। যে মেয়েটি তাঁর কাঁধে মাথা নুইয়ে রয়েছে, তার শরীরে কোনও সাড় নেই। সদ্য মৃত্যু হয়েছে তার। সম্প্রতি এমনই এক দৃশ্য স্মৃতি উস্কে দিল ওড়িশার দানা মাঝির ঘটনা। আর এই দৃশ্যই যেন এক লহমায় মিলিয়ে দিল ওড়িশা এবং মধ্যপ্রদেশকে।
চার বছরের মেয়ে অসুস্থ হওয়ায় প্রথমে তাকে বক্সা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিল পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার তাকে দামোর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যু হয় শিশুটির। মৃত্যুর পর তার দেহ বাড়িতে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন শিশুটির বাবা লক্ষ্মণ আহিরওয়াড়। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মীরা অ্যাম্বুল্যান্স দিতে অস্বীকার করেন। শুধু তাই-ই নয়, শিশুটির পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য কাকুতি-মিনতি করেও যখন অ্যাম্বুল্যান্স জোটেনি, তখন বাধ্য হয়েই মেয়ের দেহ কম্বলে জড়িয়ে বাসে চেপে বক্সায় পৌঁছন লক্ষ্মণ। বক্সায় পৌঁছে নগর পঞ্চায়েতের কাছে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তারাও ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। সেখানেও অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে লক্ষ্মণ মেয়ের দেহ কোলে নিয়ে নিজের গ্রামের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন।
শিশুটির ঠাকুরদা মনসুখ আহিড়ওয়ার বলেন, “হাসপাতালের কর্মীদের কাছে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা আমাদের কথায় কান দেননি। তার পর নাতনির দেহ কম্বলে মুড়িয়ে বাসে চেপে বক্সায় পৌঁছই। বক্সার স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও গিয়েছিলাম অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা অ্যাম্বুল্যান্স দিতে অস্বীকার করেন। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে গ্রামের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করি।”
যদিও দামোর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক মমতা তিওয়ারি অ্যাম্বুল্যান্স না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য কেউ আসেননি। আমাদের কাছে এলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করে দিতাম।”
২০১৬ সালে দানা ওড়িশার মাঝির ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কালাহান্ডির সরকারি হাসপাতাল অ্যাম্বুল্যান্স দিতে অস্বীকার করায় স্ত্রীর দেহ কাঁধে ফেলে ১০ কিলোমিটার হেঁটে গ্রামে পৌঁছন। মধ্যপ্রদেশের ছতরপুরের এই ঘটনা ছ’বছর আগের দানা মাঝির স্মৃতি উস্কে দিয়েছে।