দিল্লির বিশ্বাস নগরে একটি মদের দোকানের সামনে ভিড়। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই
লকডাউনে টানা প্রায় ছ’সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর কেন্দ্রের ছাড়পত্রে সোমবার মদের দোকান খুলতেই বিপত্তি বেধেছিল দেশের বহু শহরে। সামাজিক দূরত্বের বিধি শিকেয় তুলে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে বিশৃঙ্খলা। আর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের লাঠিচার্জ— বাদ যায়নি কোনও কিছুই। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরাসরি মদ বিক্রি বন্ধের আর্জি জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু পুরোপুরি বিক্রি বন্ধ না করে ‘হোম ডেলিভারি’র পরামর্শ দিল শীর্ষ আদালত। তার জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে উপযুক্ত ব্যবস্থা করার কথা বলেছে বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে শুনানি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টেও। এই মামলাটিও সেই ভাবেই ভিডিয়ো কনফারেন্সে শোনেন বিচারপতি অশোক ভূষণ, বিচারপতি সঞ্জয় কল ও বিচারপতি বিআর গাবাই। মামলাকারী ও সরকার পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘আমরা কোনও নির্দেশ দিচ্ছি না। তবে সামাজিক দূরত্বের বিধি কার্যকর করতে রাজ্যগুলির উচিত হোম ডেলিভারির বিষয়টি ভেবে দেখা।’’
জনস্বার্থ মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, যে ভাবে মদের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ছে এবং পুলিশের পক্ষে সামাজিক দূরত্বের বিধি কার্যকর করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মামলাকারীর পক্ষে সওয়াল করে আইনজীবী জে সাই দীপক যুক্তি দেন, সব মদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট কিছু খুলে দেওয়ায় সেই সব দোকানের সামনে প্রচুর ভিড় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চিন্তা বেশি নিষিদ্ধ গণ্ডির বাইরে, বড় মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে বড়বাজার
বর্তমান আইনে মদের হোম ডেলিভারির অনুমতি নেই। মদ বিক্রেতাদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল স্পিরিটস অ্যান্ড ওয়াইন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (আইডব্লিউএআই) এবং অ্যাপ বেসড খাবার সরবরাহকারী সংস্থা জোমাটো এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা চালাচালি করছে বলে কেন্দ্রের একাধিক সূত্রে খবর মিলেছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জোমাটোর একটি নথি হাতে পেয়ে দাবি করেছে, ওই সংস্থা মদের হোম ডেলিভারির জন্য দরবার করছে।
এই পরিস্থিতিতে বিচারপতি সঞ্জয় কল মামলাকারীর আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘হোম ডেলিভারি (মদের) নিয়ে আলোচনা চলছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করতে বলেন।’’ জবাবে জে সাই দীপক বলেন, ‘‘আমি চাই, মদ বিক্রির জন্য সাধারণ মানুষ যেন সংক্রমিত হয়ে না পড়েন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচিত মদ বিক্রি নিয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে নোটিস পাঠিয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিক।
আরও পড়ুন: কেন্দ্র নগদ না জোগালে বেকারত্বের সুনামি আসছে দেশে: রাহুল
গত ২৫ মার্চ প্রথম দফার লকডাউন শুরু হওয়ার দিন থেকেই সারা দেশে মদের দোকানগুলিও বন্ধ ছিল। ৪ মে সোমবার সোমবার থেকে মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। তবে শুধুমাত্র ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন’ অর্থাৎ স্বতন্ত্র দোকান খোলারই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ‘কনটেনমেন্ট জোন’ বাদ দিয়ে রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন— সর্বত্রই এই ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনেই দোকান চালানোর কথা বলেছিল কেন্দ্র।
কিন্তু সোমবার মদের দোকানগুলি খুলতেই সামনে মদ কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পুলিশকে ভিড় সামলাতে লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল দিল্লিতে। এ ছাড়া দেশের প্রায় সর্বত্রই ছিল একই ছবি। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে প্রায় সব জায়গাতেই বলপ্রয়োগ করতে হয়েছিল। দেশ জুড়ে এই ছবি দেখে আঁৎকে উঠেছিলেন অনেকেই। সেই সমস্যা কাটাতেই সুপ্রিম কোর্ট হোম ডেলিভারি নিয়ে ভাবনাচিন্তার পরামর্শ দিল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সব মহল।