ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের এখনও প্রায় ছ’সপ্তাহ বাকি। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির প্রবল তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে হঠাৎ হাই প্রোফাইল হয়ে ওঠা এই কেন্দ্রটিকে ঘিরে। এই কেন্দ্র থেকেই প্রথম বারের জন্য বিধানসভা ভোটে লড়বেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাই তাঁর জয় শুধু সুনিশ্চিত করাটাই লক্ষ্য নয় বিজেপির। জয়ের ব্যবধান যত বেশি রাখা যায়, ঝাঁপানো হচ্ছে সে জন্যও।
বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তথা যোগী নিজেও জানেন, কাজটা সহজ নয়। গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। সম্প্রতি যে ভাবে দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর মন্ত্রীরা দল ছেড়ে তোপ দাগছেন যোগী প্রশাসনের দিকে, সেটিও ভাল লক্ষণ বলে মনে করছেন না শীর্ষ নেতৃত্ব। সর্বোপরি এখানেই লড়বেন বলে বুক ঠুকে দাঁড়িয়েছেন দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ, যাঁর সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ে জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত।
সব মিলিয়ে তাই কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন যোগী অনেক আগে থেকেই। বিশ বছর আগে উত্তরপ্রদেশে তিনি নিজে হাতে তৈরি করেছিলেন হিন্দু যুবা বাহিনী। ‘হিন্দুত্বের রক্ষক’ হিসাবে এই বাহিনী গোড়াতে কিছুটা পর্দার আড়ালেই ছিল বলে বলছেন ওয়াকিবহাল রাজনৈতিক শিবির। কালক্রমে তাদের প্রতাপ সামনে আসে। হিন্দু সংস্কৃতি এবং গো-সুরক্ষা তাদের প্রধান কাজ হলেও ছোটখাটো বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সঙ্গেও তাদের যুক্ত হতে দেখা গিয়েছে। মূলত গোরক্ষপুর এবং তার সংলগ্ন মউ, শ্রাবস্তী, মহারাজগঞ্জ, কুশিনগর, বলরামপুরের মতো জেলাগুলিতে হিন্দু যুবা বাহিনীকে সক্রিয় হতে দেখা যেত। কিন্তু ২০১৭ সালে যোগী ক্ষমতার আসনে বসার পর এঁদের বল এবং ব্যপ্তি বাড়ে।
আপাতত সোশ্যাল মিডিয়া এবং মাঠে ময়দানে প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছে বাহিনী। প্রত্যেক দিন পরিস্থিতির পর্যালোচনা হচ্ছে। ভোটকৌশল নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। বাহিনীর গোরক্ষপুরের আহ্বায়ক ঋষি মোহন বলছেন, “যে হেতু আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক যোগীজি দাঁড়াচ্ছেন, দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার গত পাঁচ বছরে যা যা কাজ করেছে, তাকে জনপ্রিয় করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছি আমরা।” তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেই তাঁরা প্রচারের কাজ করছেন। লক্ষ্য, যত বেশি সম্ভব ভোট যোগী আদিত্যনাথের দিকে টেনে আনা।
রাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গোরক্ষপুরে ভোটের লড়াই খুবই চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠতে চলেছে এখানকার মানুষের সামাজিক ভিত্তির কারণে। প্রায় আড়াই লাখ ভোটারের মধ্যে ৪৫ হাজার ভোটার তফসিলি জাতি এবং উপজাতির। মুসলিমদের সংখ্যা ৪৫ হাজার। আজাদ সমাজ পার্টি (কাঁসিরাম)-র চন্দ্রশেখর আজাদ এখানে তফসিলিদের মধ্যে জনপ্রিয় নাম। তাই যোগীর জেতার বিষয়টি নিয়ে কোনও আত্মতুষ্টির অবকাশ রাখতে চাইছে না বিজেপি এবং হিন্দু যুবা বাহিনী।