Assam Election

হিমন্ত আওড়ালেন তো বটে, কিন্তু লেখাটা কার!

২০১৯ সালে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই একই লাইন লেবাননের কবি কালিল জিব্রান-এর পঙ্‌ক্তি হিসেবে টুইট করেছিলেন। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২১ ০৫:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথম টুইটেই রবীন্দ্রনাথ, বায়রন, কালিল জিব্রান, লুইজ়া মে অ্যালকট, এলেন স্টার্জিস হুপার মায় নরেন্দ্র মোদী— সকলকে মিলিয়ে দিলেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা!

Advertisement

রবিবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণার বৈঠক চলাকালীনই ২৫ বৈশাখের কবিপ্রণামে হিমন্তর করা রবীন্দ্র-উদ্ধৃতিটি কবির কোন কবিতা বা রচনার অংশ, তা খুঁজে বা বুঝে পাচ্ছিলেন না রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞরা।

“আই স্লেপ্ট অ্যান্ড ড্রিম্ট দ্যাট লাইফ ওয়জ় জয়। আই অ্যাওক অ্যান্ড স দ্যাট লাইফ ওয়জ় সার্ভিস। আই অ্যাক্টেড অ্যান্ড বিহোল্ড, সার্ভিস ওয়জ় জয়।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম করে এই উক্তি ব্যবহার করেই টুইট করেছিলেন হিমন্ত। কিন্তু লাইনগুলির প্রকৃত রচয়িতা কে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে অনেক দিন থেকেই।

Advertisement

২০১৯ সালে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই একই লাইন লেবাননের কবি কালিল জিব্রান-এর পঙ্‌ক্তি হিসেবে টুইট করেছিলেন। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়। নেটিজ়েনরা অনেকে ইমরানের ভুল ধরিয়ে জানান, লাইনগুলি রবীন্দ্রনাথের।

এ দিকে, লর্ড বায়রনের বহুলপ্রচলিত উক্তি হিসেবে রয়েছে, আই স্লেপ্ট অ্যান্ড ড্রিম্ট দ্যাট লাইফ ওয়জ় বিউটি; আই ওক অ্যান্ড ফাউন্ড দ্যাট লাইফ ওয়জ় ডিউটি। অনেকে দাবি করছেন, লাইনগুলি মার্কিন ঔপন্যাসিক লুসিয়া মে অ্যালকটের। কিন্তু ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভ এবং অক্সফোর্ড এসেনসিয়াল কোটেশনস বলছে, উপরের লাইনগুলি উনিশ শতকের মার্কিন কবি অ্যালেন স্টার্জিস হুপারের।

এ তো গেল প্রথম দুই লাইনের কথা। পরের লাইনগুলি তবে কার? — যা ইন্টারনেটে রবীন্দ্রনাথের রচনা হিসেবেই ব্যবহৃত ও প্রচলিত!

রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “পঙ্‌ক্তিগুলির অ-রাবীন্দ্রিক চলন, অবিন্যস্ত বিন্যাস, হঠাৎ করেই সমাপতন— কোনও দিক থেকেই রবীন্দ্রনাথের রচনাশৈলীর সঙ্গে মেলে না। এগুলি প্রকৃতই রবীন্দ্ররচনা হলে তার কাছাকাছি অর্থের বাংলা কবিতার কথা অন্তত মনে আসত। তেমন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।”

অবশ্য ‘পরীক্ষা পে চর্চা ২০২১’ অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত এপ্রিলে ঠিক এমনই চারটি লাইন রবি ঠাকুরের উদ্ধৃতি হিসেবে আউড়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ‘‘বন্ধুরা, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম জীবন আনন্দময়, আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম জীবনই সেবার, আমি সেবা করে দেখেছি যে সেবাতেই আনন্দ।’’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অন্য ছাত্রছাত্রীদের মাথায় না থাকলেও, জীবনের কঠিনতম পরীক্ষায় নামা হিমন্ত হয়তো ভোলেননি। আর তাই কি, পরীক্ষাজয়ের পরে এক উদ্ধৃতিতেই কবিগুরু ও রাজনৈতিক গুরুর বন্দনা সেরে ফেললেন তিনি? প্রশ্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

চিত্রনাট্য গত রাতেই তৈরি ছিল। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নামঘোষণা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তাই পঙংক্তি বাছাই সেরে রেখেছিলেন সঠিক সময়ে পোস্ট করার অপেক্ষায়।

কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বিরূপ না হলে হয়ত ৫ বছর আগেই এই দিন আসত। তরুণ গগৈ মন্ত্রিসভার যোগ্যতম মন্ত্রী হয়েও বুঝতে পেরেছিলেন তিনি নন, তরুণপুত্র গৌরবকেই পরের মুখ্যমন্ত্রী করার চেষ্টা হবে। ২০১৪ সালে অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে হিমন্ত যোগ দেন বিজেপিতে। তিন বারের কংগ্রেস শাসন শেষ করে বিজেপিকে প্রথম বার রাজ্যে ক্ষমতায় আনেন।

তাঁর ক্ষমতা আঁচ করে অমিত শাহ গোটা উত্তর-পূর্বে এনডিএ শাসন প্রতিষ্ঠার ভার দেন হিমন্তর উপরে। তৈরি হয় কংগ্রেস বিরোধী দলগুলির জোট নর্থ ইস্ট ডেমোক্রাটিক অ্যাল্যায়ান্স বা নেডা। সচতুর কূটনীতিতে একে একে সব কটি রাজ্যে হয় বিজেপি না হলে বিজেপি জোটের সরকারকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করেন হিমন্ত।

আসুর সামান্য ছাত্রকর্মী থেকে উঠে এসে প্রফুল্ল মহন্ত, তরুণ গগৈদের টক্কর দিয়ে আজ অসমের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হওয়া হিমন্তর নাম সারদা মামলা ও লুই বার্জার ঘুষ কাণ্ডে জড়িয়েছিল। চলেছিল সিবিআই তল্লাশি ও জেরা। প্রমাণ হয়নি কিছুই। অতীতে আলফার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement