এক রহস্যময় হ্রদ। বছরের প্রায় আট মাসই থাকে বরফে ঢাকা। আর এই বরফে ঢাকা হ্রদ ঘিরেই রয়েছে অপার রহস্য।
বরফ গলতে শুরু করলেই এই জলাশয়ের আশপাশে একের পর এক কঙ্কালের দেখা মিলত এক সময়ে। যা নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে। এই রহস্যময় লেক কোথায় জানেন?
হিমালয়ের কোলে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় ওয়ান গ্রামে অবস্থিত এই লেক। যাকে বলা হয় রূপকুণ্ড।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬,৪৯৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই লেকের জলে এত কঙ্কাল কী ভাবে এল?
১৯৪২ সালে এক ব্রিটিশ রক্ষী বরফে মোড়া লেকে প্রথম বার দেখতে পান বেশ কিছু হাড়গোড়।
গরমে বরফ গলতে শুরু করলে হাড়গোড় ও কঙ্কালের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
প্রাথমিক ভাবে ব্রিটিশদের ধারণা হয়, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্ঘাত জাপানিরা এই পথে ভারতে প্রবেশ করতে শুরু করেছিলেন। সেই সময় তাঁরা পথ হারিয়ে ফেলেন। এবং কোনও ভাবে দুর্ঘটনায় মারা যান।
পরে ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদরা হাড়গুলি পরীক্ষা করে দাবি করেন, হাড়গুলি জাপানি সৈন্যদের হতেই পারে না, কারণ এই হাড়গুলি অনেক প্রাচীন।
স্থানীয়দের অনেকে দাবি করেন, এইখানে এক সময়ে পালা করে আত্মহত্যা করত এক দল লোক। আত্মহত্যার নাকি প্রথাও ছিল এক সময়। রটে যায়, প্রেতাত্মারা নাকি এই লেকে বাস করে। কোনও কোনও পর্যটক তো এর পর রূপকুণ্ড অভিযানে যেতেই ভয় পেতেন।
রহস্য সমাধানে ২০০৪ সালে রূপকুণ্ড অভিযান করা হয়। জানা যায়, ৮৫০ শতকের কঙ্কাল এগুলি। বিজ্ঞানীদের অন্য একটি দল অবশ্য দাবি করেন, হাড়ের বয়স ২০০ বছরের কাছাকাছি।
মারাত্মক ঠান্ডার কারণে হাড়, মাংস সবই প্রায় অক্ষত থেকেছে বছরের পর বছর। কিছু কঙ্কালের গায়ে মাংস লেগে থাকার কারণেই প্রথমে এই কঙ্কালগুলির বয়স বোঝা যায়নি। এদের মধ্যে দু’টি দলকে শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। জানা যায়, একটি দলের সদস্যরা একই গোত্রের, অপর দল একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর।
স্থানীয় এক উপকথা অনুযায়ী, এক দেবী রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দেওয়ায় শিলাবৃষ্টি নেমে এসেছিল। যার ফলে ওই এলাকার সব বাসিন্দার মৃত্যু হয়। এই দেবীকে নন্দা দেবী রাজ জাট বলেন স্থানীয়রা। এই কঙ্কালগুলি তাদেরই।
অন্য এক উপকথা অনুযায়ী, যশোদ্ধল নামে এক রাজার অন্তঃসত্ত্বা রানির গর্ভস্থ ভ্রূণ পড়ে গিয়েছিল রূপকুণ্ডে। সেই আত্মাই নাকি পর্যটকদের আক্রমণ করে মেরে ফেলত। সেই মৃত পর্যটকদেরই কঙ্কাল এগুলি।
বিজ্ঞানীর কিন্তু বলছেন অন্য কথা। বহু বছর আগে স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে তীর্থযাত্রায় এসেছিল একটি দল। আচমকা মারাত্মক শিলাবৃষ্টির কারণে মৃত্যু হয় গোটা দলটির।
প্রতিটি খুলির মাঝে ফাটল, এটা ছিল কঙ্কালগুলির বৈশিষ্ট্য। ছোট কিন্তু এই গভীর আঘাত থেকেই মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।