বন্যার জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে ব্রিজ। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে
টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে বানভাসি কেরল। ধস ও বন্যায় অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ অনেকে। দুর্গতদের উদ্ধারে নামানো হয়েছে সেনা ও ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) বা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। জলের চাপে ২৬ বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে ইদুক্কি জলাধারের একটি গেট। শুক্রবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। চেয়ে পাঠানো হয়েছে আরও এনডিআরএফ এবং সেনা জওয়ানদের।
টানা পাঁচ দিন ধরে ভারী থেকে অতি ভারীবৃষ্টি চলছে কেরলে। তার জেরে বানভাসি ইদুক্কি, মালাপ্পুরম, কোঝিকোড়, ওয়ানাড়, পালাক্কাড় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত জলের তলায়। দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে নামানো হয়েছে সেনা জওয়ানদের। নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং দমকল বাহিনীকেও। নিচু এলাকা থেকে উদ্ধারের কাজ চলছে। কয়েক লক্ষ বাড়িঘর জলের তলায়। কোচি বিমানবন্দরে উড়ান নামা বন্ধ রাখা হয়েছিল বন্যার আশঙ্কায়। পেরিয়ার নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বাতিল করা হয়েছে আলাপ্পুঝায় নির্ধারিত নেহরু জাতীয় বোট রেস।
সব মিলিয়ে কেরল জুড়ে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইদুক্কি জেলা। সেখানে একই পরিবারের পাঁচ জন-সহ মোট ১১ জনের। এছাড়া মালাপ্পুরমে ছ’জন, কোঝিকোড়ে এক জন মারা গিয়েছেন। অন্যান্য জেলা থেকেও মৃত্যুর খবর এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
কোচিতে জলের তলায় বিস্তীর্ণ এলাকা। ডুবে গিয়েছে শিব মন্দির। ছবি: এএফপি
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি, শিব ভক্তদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বিতর্কে পুলিশকর্তারা
বন্যা নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার একাধিক জরুরি বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। পর্যাপ্ত ত্রাণের বন্দোবস্ত করা এবং দুর্গতদের দ্রুত উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুক্রবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় ছ’টি জেলায় স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইদুক্কির একটি গেট আংশিক খুলে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনে সব মিলিয়ে মোট ২২টি বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়েছে। সেই সব বাঁধের জলে বানভাসি বহু এলাকা।
মোকাবিলার প্রস্তুতি
কোঝিকোড়, এর্নাকুলাম ও আলাপ্পুঝায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার তিনটি দল উদ্ধারকাজে নেমেছে। বহু জায়গায় দুর্গত মানুষজনকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছেন, ‘‘জীবন ও সম্পত্তির বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও সেনা, নৌবাহিনী, এনডিআরএফ, পুলিশ ও দমকল উদ্ধারে কাজ করছে। আরও ৬ কোম্পানি এনডিআরএফ চেয়ে পাঠানো হয়েছে।’’
উদ্ধার ও ত্রাণ
প্রাথমিক ভাবে বানভাসি এলাকা থেকে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে জোর দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় স্কুল-কলেজে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। সেই সব শিবিরে ত্রিপল, খাবার দেওয়া হচ্ছে। তদারকিতে স্থানীয় প্রশাসনকে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে হাত লাগিয়েছেন।
ইদুক্কিতে ধসের নিচে চাপা পড়া এক শিশুকে উদ্ধার করছেন দমকল কর্মীরা। ছবি: পিটিআই
উপচে পড়ছে বাঁধ
১৯৯২ সালে খোলা হয়েছিল ইদুক্কি জলাধারের গেট। তারপর আর বিপদসীমার কাছাকাছি আসেনি এই বাঁধের জলাধার। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফের ইদুক্কির জলস্তর ধারণক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসে। কেরলের বিদ্যুৎমন্ত্রী এম এম মণি বৃহস্পতিবার বাঁধ পরিদর্শনের পর জানান, একটি গেটের একাংশ পরীক্ষামূলকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার একটি গেট পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া অধিকাংশ বাঁধেই জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তার জেরে নদীগুলিতে জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।
ব্যাহত উড়ান
২০১৩ সালে বন্যায় কোচি বিমানবন্দর জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। বৃহস্পতিবারও পেরিয়ার নদীর জল উপচে রানওয়ে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বানভাসির আশঙ্কা করেই এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ বিমান নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বিকেলের দিকে বিমান উড়তে শুরু করে কোচি থেকে।
আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস
শুক্রবারও টানা ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন করে আরও অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দুর্যোগ আরও ভয়াবহ আকার নেওয়ার আশঙ্কায় তৈরি থাকতে বলা হয়েছে নিচুস্তরের প্রশাসনকেও।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)