হাথরসের গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে ভীম আর্মির মিছিল। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা হাথরসের ধর্ষিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আসার পরের দিনই সেখানে উচ্চবর্ণের লোকেদের নিয়ে জমায়েত করল বিজেপি। মৃতা দলিত তরুণীর বাড়ি থেকে ৮-৯ কিলোমিটার দূরে, বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক রাজবীর সিংহ পালওয়ানের বাড়িতে আজ প্রায় সাত-আটশো লোকের সমাবেশ করে অভিযুক্তদের নিরপরাধ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ওই সমাবেশে এক অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে আজ সকালে মৃতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবার বয়ান রেকর্ড করেছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)।
উচ্চবর্ণের সমাবেশের অন্যতম আয়োজক রাজবীর-পুত্র মনবীর সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আজ তাঁদের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সিবিআই তদন্তের যে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। তদন্তে আমাদের ভরসা রয়েছে।’’ তবে নির্যাতিতার পরিবার ‘বারবার অবস্থান বদলাচ্ছে’ এবং এখন ‘অন্য ধরনের তদন্ত’ চাইছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। পুলিশে যাঁরা প্রথম অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই পাল্টা এফআইআর করার দাবি তোলেন মনবীর। বিজেপির প্রাক্তন বিধায়কের পুত্র ওই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া যুবকদের নিরপরাধ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে যুক্তি দেন, ‘‘যদি ওরা অপরাধ করে থাকত, তা হলে বাড়িতেই রয়ে গেল কেন?’’ চার অভিযুক্তকে তাদের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উচ্চবর্ণের সমাবেশে হাজির ছিলেন রামু নামে এক অভিযুক্তের মা। তিনিও দাবি করেন, তাঁর ছেলে নিরাপরাধ।
হাথরসের গ্রামের আশপাশে এই পরিস্থিতির মধ্যে ভীম আর্মির নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ আজ ধর্ষিতার পরিবারকে ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’ নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘এঁরা এখানে সুরক্ষিত নন। মৃতার পরিবারকে ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’ নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি তুলছি আমরা। না হলে আমি ওই পরিবারকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাব।’’ আজ উচ্চবর্ণের সমাবেশ থেকে দলিত নেতা চন্দ্রশেখরের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। উচ্চবর্ণের সমাবেশকে ঘিরে রাজবীরের বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। সেখানে বসেই উত্তেজিত অবস্থায় চন্দ্রশেখরকে সরাসরি হুমকি দিতে দেখা যায় ঠাকুর সম্প্রদায়ের এক নেতাকে। পাশে বসে তাঁকে থামাতে দেখা যায় অন্য এক জনকে। তবে যোগীর পুলিশ তখন ওই নেতার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল।
নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে ভীম সেনার চন্দ্রশেখর আজাদ। —নিজস্ব চিত্র।
এই পরিস্থিতিতে নির্যাতিতার পরিবার আজও প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। হাথরসের জেলাশাসককে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছেন মৃতার ভাই। সুপ্রিম কোর্টের এক জন প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তের দাবি তুলেছেন তিনি। নির্যাতিতার পরিবারকে আইনি সহায়তা দিতে হাথরসে পৌঁছেছেন নির্ভয়া মামলার আইনজীবী সীমা সমৃদ্ধি। ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যরা সীমাকে তাঁদের মামলা লড়তে অনুরোধ করেছিলেন। সীমা একটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, হাথরস ধর্ষণ মামলা যাতে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়, সে জন্য আদালতে আর্জি জানানো হবে।
আরও পড়ুন: হাতে মাইক, মনে জেদ, হাথরসের দুই আসল বীরাঙ্গনা
আরও পড়ুন: ঝরঝরে বাংলায় তনুশ্রী বললেন, কাউকেই ভয় পাই না। কাজ থামবে না
ভীম আর্মির নেতা চন্দ্রশেখর আজও অভিযোগ এনেছেন, অভিযুক্তদের বাঁচাতে সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যোগী সরকার। জেলাশাসককে সাসপেন্ড করা এবং হাতরসের ঘটনায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করার দাবি তুলেছেন প্রিয়ঙ্কাও। কংগ্রেস নেত্রী আজ টুইট বলেছেন, ‘‘মৃতার পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সবচেয়ে খারাপ ব্যবহার করেছেন জেলাশাসক। এখন তাঁকে কে বাঁচাচ্ছে?’’ ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হাথরসে আজ পুলিশের লাঠিচার্জের মুখে পড়তে হয়েছে সমাজবাদী পার্টি, ভীম আর্মি, রাষ্ট্রীয় লোকদলের সমর্থকদের। আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরির উপর পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার নিন্দা করে যোগী সরকারকে আক্রমণ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘বিরোধীদের উপর পুলিশি নির্যাতন যোগী সরকারের অহঙ্কারের প্রকাশ। মনে হয়, দেশে গণতন্ত্র থাকার কথা ভুলে গিয়েছেন ওঁরা। জনতাই সে কথা ওঁদের মনে করিয়ে দেবে।’’