Hathras Gangrape

চাপের মুখে হাথরস কাণ্ডে সাসপেন্ড এসপি, ডিএসপি এবং দুই পুলিশকর্মী

নির্ভয়া-কাণ্ডের সময় তৎকালীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবে গর্জে উঠেছিলেন দিল্লিবাসী, আজও একই ছবি রাজধানীতে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ২১:০৭
Share:

পোস্টার হাতে রাজধানীর রাস্তায় প্রতিবাদী মানুষের ঢল।

হাথরসকাণ্ডে সাসপেন্ড করা হল হাথরসের পুলিশ সুপার, ডিএসপি এবং আরও দুই পুলিশকর্মীকে। শুক্রবার রাতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। ওই ঘটনায় গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে। হাথরসের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চাপে যোগী সরকার। বিরোধীদের ঠেকিয়ে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক তারা। কিন্তু রাজনৈতিক রোষ ইতিমধ্যেই আছড়ে পড়েছে রাজধানী দিল্লিতে। আট বছর আগে নির্ভয়া-কাণ্ডের সময় তৎকালীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবে সমবেতকণ্ঠে গর্জে উঠেছিলেন দিল্লিবাসী, শুক্রবার সন্ধ্যায় যন্তর মন্তর-সহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে সেই দৃশ্যই ফিরে এল। নির্যাতিতা যাতে ন্যায়বিচার পান, তার জন্য রাজধানীর রাজপথে ভিড় জমাচ্ছেন শ’য়ে শ’য়ে সাধারণ মানুষ। রয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরাও।

Advertisement

হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন শুরুতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে জমায়েত করে প্রতিবাদ জানানো হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি তেতে উঠতে পারে আশঙ্কা করে ইন্ডিয়া গেটের সামনে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা বসায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ। ইন্ডিয়া গেট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করেন ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। বিকেল ৫টা থেকে সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের সামনেই অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন কয়েক’শো মানুষ। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি মানুষ প্রতিবাদে অংশ নেন। পরিস্থিতি যাতে হিংসাত্মক আকার না-নেয়, তার জন্য ‘জনপথ’ মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ‘রাজীব চক’, ‘পটেল চক’ মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোনর সব পথ বন্ধ রাখা হয় কিছুক্ষণ। ঠিক হয়, ওই স্টেশনগুলিতে ট্রেনই দাঁড়াবে না। পরে যদিও স্টেশনে ঢোকা বেরোনর সব পথ খুলে দেওয়া হয়।

গাঁধীজয়ন্তীর দিনে এই প্রতিবাদ মিছিলে মহাত্মা গাঁধীর বেশেই অংশ নেন কংগ্রেস সমর্থকরা। এক হাতে মোমবাতি, অন্য হাতে লাঠি নিয়ে, খদ্দরের ধুতি পরে, খালি গায়ে উত্তরীয় চাপিয়ে মিছিল করে যন্তর মন্তরে পৌঁছন তাঁরা। বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন, ভীম আর্মির সদস্যরাও মিছিল করে, স্লোগান দিতে দিতে যন্তরমন্তরে পৌঁছন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালও। তিনি জমায়েতে বলেন, ‘‘গোটা দেশের একটাই দাবি, দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। তাদের আড়াল করার যে একটা চেষ্টা চলছে, তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার। এমন পরিস্থিতিতে নির্যাতিতার পরিবারকে সাধ্যমতো সাহায্য করতে হবে আমাদের।’’

Advertisement

মোমবাতি হাতে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: নির্যাতিতার জন্য লড়বেন নির্ভয়ার আইনজীবী, হাথরসে তাঁকেও আটকাল পুলিশ​

হাথরসের ঘটনার রাজনীতিকরণ হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন কেজরীবাল। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে কোনও ধরনের রাজনীতি হওয়া উচিত নয়। উত্তরপ্রদেশ হোক বা মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মুম্বই অথবা দিল্লি— কোথাও এমন ঘটনা ঘটবেই বা কেন? দেশের কোনও প্রান্তেই ধর্ষণের ঘটনা কাম্য নয়। এক নিদারুণ যন্ত্রণা থেকে এখানে একজোট হয়েছি আমরা। প্রার্থনা করি, আমাদের কন্যার আত্মা যেন শান্তি পায়। উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, যত শীঘ্র সম্ভব দোষীদের ফাঁসি দেওয়া হোক। তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভয়াবহ অপরাধ করার সাহস কেউ না পায়।’’

সিপিআই (এম) নেতা ইয়েচুরি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকারই নেই। আমরা ন্যায্যবিচার চাই। এই ধরনের জঘন্য অপরাধ ঘটে গেলেও কেন্দ্রীয় সরকার নীরব। বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বও চুপ। গোটা ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকার যে ভাবে এগিয়েছে, তাতে শাসকদলের স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক চেহারা, চাল, চরিত্র এবং চিন্তাভাবনার উপর থেকে পর্দা সরে গিয়েছে।’’

হাথরস-কাণ্ডে শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকা। পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে দিল্লির সফদরজং হাসপাতাল থেকে নির্যাতিতার দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, রাতারাতি সেই দেহ পুড়িয়ে ফেলা-সহ তাদের প্রতিটি পদক্ষেপই বিতর্ক তৈরি করেছে। অভিযোগ নিতে দেরি করা, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার হওয়ার পরও ধর্ষণের অভিযোগ মানতে না চাওয়া, রাজ্য পুলিশের একের পর এক আচরণও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের প্রতি বড় অংশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। যোগীর পদত্যাগ দাবি করেছেন ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর। নির্যাতিতার দেহ নিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করে মঙ্গলবার সফদরজং হাসপাতালে ধর্নায় বসেছিলেন তাঁরা। এ দিন যন্তর মন্তরের বিক্ষোভে শামিল হয়ে আজাদ বলেন, ‘‘আমি হাথরস যাবই। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। আমার অনুরোধ, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক।’’

মহাত্মা গাঁধীর বেশে রাস্তায় কংগ্রেস সদস্যরা।

আরও পড়ুন: ‘গণধর্ষণের শিকার গণতন্ত্র’, রাহুলকে ধাক্কা প্রসঙ্গে মন্তব্য সঞ্জয় রাউতের​

জীবৎকালে নিম্নবর্গের অধিকার রক্ষায় লড়তে দেখা গিয়েছিল মহাত্মা গাঁধীকে। হাথরসের দলিত সম্প্রদায়ের নির্যাতিতার জন্য সুবিচার পেতে তাই এ দিনের গাঁধীজয়ন্তীকেই বেছে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ দিন সকালে দিল্লির বাল্মীকি মন্দিরে নির্যাতিতার শোকসভারও আয়োজন হয়। ক‌ংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা তাতে যোগ দিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের বোনের জন্য ন্যায্য বিচার আদায় করেই ছাড়ব। তা না হওয়া পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। নির্যাতিতার পরিবারকে কোনও সাহায্যই করেনি সরকার। অত্যন্ত অসহায় বোধ করছেন ওঁরা। এমনকি, রীতি মেনে সৎকারটুকুও করতে দেওয়া হয়নি। সরকারের উপর চাপ বাড়াতেই হবে। ’’

(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় হাথরসের জেলাশাসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে লেখা হয়েছিল। কিন্তু হাসরথের জেলাশাসক সাসপেন্ড হননি, সাসপেন্ড হয়েছেন সেখানকার ডিএসপি। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement