ধর্ষণ, নারী নির্যাতন নিয়ে যোগী আদিত্যনাথকে কটাক্ষ মায়াবতীর। —ফাইল চিত্র
হাথরস থেকে বলরামপুর— উত্তরপ্রদেশে একের পর এক ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় যোগী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। মুখ্যমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ, তাই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়ে বিএসপি নেত্রীর তোপ, ‘‘যোগীকে গোরক্ষপুরে পাঠিয়ে দিন।’’ যোগীর শাসনে উত্তরপ্রদেশে ‘বোনেরা নিরাপদ নয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন দলিত নেত্রী মায়াবতী।
মঙ্গলবার দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে হাথরসের দলিত মহিলার মৃত্যুর পরেই দেশ জুড়ে এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে যোগী রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। হাথরসের ওই ঘটনার পরে ফের উত্তপ্রদেশেরই বলরামপুরে প্রায় একই রকম ভাবে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। একের পর এই ধরনের ঘটনায় শুধু রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন নয়, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুললেন বিএসপি নেত্রী।
হাথরসের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড়। তার মধ্য়েও ফের বলরামপুরের ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মায়াবতী। একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘হাথরসের ঘটনার পর ভেবেছিলাম, মহিলাদের উপর অত্যাচার-ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে উত্তরপ্রদেশ সরকার। কিন্তু তার পরেও একই রকম ভাবে দলিত ছাত্রীর উপর একই রকম নির্যাতন করা হল। রাজ্যে বিজেপির শাসনে অপরাধী, মাফিয়া, ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: কনভয় আটকাল পুলিশ, হেঁটেই হাথরসের দিকে রাহুল প্রিয়ঙ্কা
কিছু দিন আগেই এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে কানপুরের মাফিয়া ডন বিকাশ দুবে। আরও বেশ কিছু এনকাউন্টার হয়েছে যোগীর শাসনে। সেই এনকাউন্টার সত্যি নাকি ভুয়ো, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একই প্রশ্ন তুলেছেন মায়াবতীও। বিএসপি নেত্রী এ দিন বলেন, ‘‘অপরাধীদের এনকাউন্টার করা হচ্ছে, বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লোকে বলছে, এগুলোর কোনওটাই সততার সঙ্গে নয়, বরং করা হয়েছে শুধুই রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে। যদি সেটা হয়, তা হলে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সমাজের সব স্তরের মানুষ এই সরকারের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ। সমস্ত ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মা-বোনেরা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের তরুণী-যুবতীদের একদমই নিরাপত্তা নেই।’’
আরও পড়ুন: যোগী আমলে ধর্ষণ করে খুনের রমরমা ‘উত্তমপ্রদেশে’
এর জন্য দায়ী কে? মায়াবতীর সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে। তাঁকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রকে বলতে চাই, উত্তরপ্রদেশ সরকারের ঘুম ভাঙছে না। যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। হয়তো আরএসএস-এর চাপে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে, কিন্তু যোগী সরকার চালাতে অক্ষম। ওঁকে গোরক্ষপুর পাঠিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করুন, নয়তো রাজ্য়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করুন।’’
আজ বৃহস্পতিবারই রাহুল-প্রিয়ঙ্কার হাথরস গিয়েছেন। মায়াবতী অবশ্য দলের নেতা-নেত্রীদের আগেই হাথরসে পাঠিয়েছিলেন বলে জানিয়ে অভিযোগ করেন, তাঁদের নির্যাতিতার বাড়িতেই যেতে দেওয়া হয়নি। উল্টে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল এবং সেখানে পরিবারের লোককে ডেকে কথা বলতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাশে সারাক্ষণ পুলিশকর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। একান্তে কথা বলতে পারেননি। হাথরসের মহিলার মৃতদেহ পরিবারের হাতে না দিয়ে মধ্যরাতে পুড়িয়ে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তা নিয়েও এ দিন সরব হয়েছেন বিএসপি সুপ্রিমো।