হাথরসের গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তিন জনের মুক্তি ঘিরে বিতর্ক। ফাইল চিত্র।
হাথরসে দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ২০২০-র ডিসেম্বের সিবিআইয়ের পেশ করা প্রথম চার্জশিটেই তার ইঙ্গিত ছিল। বৃহস্পতিবার জেলার তফসিলি জাতি-জনজাতি আদালত চার অভিযুক্তের মধ্যে তিন জনকেই বেকসুর খালাস করায় সেই অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ।
শুক্রবার নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যেরা বলেছন, ন্যায়বিচারের জন্য তাঁদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। নিহত তরুণীর দাদা বলেন, ‘‘আমার বোনের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের লড়াই নিষ্ফল হয়েছে। আমরা এখনও ন্যায়বিচার পাইনি। কিন্তু আমরা হাল ছাড়ব না। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার তফসিলি জাতি-জনজাতি আদালত তিন অভিযুক্ত রবি, লবকুশ এবং রামুকে সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে মুক্তি দেয়। আর এক অভিযুক্ত সন্দীপকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০৪ (অপরাধমূলক হত্যা) এবং ৩০২ (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছিল পুলিশের প্রাথমিক গাফিলতির কারণে তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা এবং পরবর্তী কালে ফরেন্সিক পরীক্ষায় দেরি হয়। নানা ফাঁক-ফোঁকর থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। যদি এই ঘটনাটা প্রথম থেকেই ঠিক ভাবে দেখা হত, তা হলে এই সব তথ্য পাওয়া যেত বলেই চার্জশিটে জানিয়েছে সিবিআই।
চার্জশিটে দাবি করা হয়, ৪ অভিযুক্তের মধ্যে সন্দীপের ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। ১৭ অক্টোবর থেকে ৩ মার্চের মধ্যে তাঁদের দু’জনের মধ্যে ফোনে ১০৫ বার কথা হয়েছিল। সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ হয় (এক প্রত্যক্ষদর্শী এমনটাই দাবি করেছে সিবিআইয়ের কাছে)। সেই ঘটনার পর তরুণী এবং অভিযুক্ত সন্দীপের মধ্যে কথা বন্ধ হয়ে যায়।
২০২০ সালের গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। গুরুতর জখম অবস্থায় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ২৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তরুণীর। মৃত্যুর আগে ২২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের শয্যা থেকে দেওয়া বয়ানে ওই তরুণী ৪ অভিযুক্ত সন্দীপ, রামু, লবকুশ এবং রবি-র নামে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশ গোপনে গ্রামে দেহ নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি নিয়ে ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকায় শেষমেশ সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।