তাঁর অনেক নাম। কখনও তিনি ‘বজরঙ্গবলী’, কখনও ‘ফৌজি’ আবার ‘পাশা’ নামেও পরিচিত। ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় নাম থাকার কারণে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে সময়ে সময়ে নাম বদলেছেন। শুধু নামই নয়, নিজের হুলিয়াও বদলেছেন তিনি।
আসল নাম ওমপ্রকাশ। বয়স ৬৫। হরিয়ানার পানিপতের সামলাখা তহশিলের নারাইনা গ্রামের বাসিন্দা।
৩০ বছর নানা পরিচয়ে লুকিয়ে থাকার পর কয়েক দিন আগেই গাজিয়াবাদ থেকে হরিয়ানা পুলিশের এসটিএফের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
১২ বছর ধরে ভারতীয় সেনার সিগন্যাল কোরের গাড়িচালক হিসাবে কাজ করতেন ওমপ্রকাশ। চার বছর ধরে কাজে না যাওয়ায় ১৯৮৮ সালে বরখাস্ত করে দেওয়া হয় ওমপ্রকাশকে।
১২ বছর ধরে ভারতীয় সেনার সিগন্যাল কোরের গাড়িচালক হিসাবে কাজ করতেন ওমপ্রকাশ। চার বছর ধরে কাজে না যাওয়ায় ১৯৮৮ সালে বরখাস্ত করে দেওয়া হয় ওমপ্রকাশকে।
চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে খুন— একাধিক অপরাধে জড়িত ওমপ্রকাশ। তাঁর নামে হরিয়ানার একাধিক জেলায় মামলা রুজু হয়েছে।
১৯৮৬ সালে ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে গাড়ি চুরির অভিযোগ ওঠে। তার ঠিক চার বছর পর মোটরবাইক, সেলাই মেশিন এবং স্কুটার চুরির অভিযোগ দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকটি অপরাধে ধরা পড়েন, আবার জামিনও পান। তার পর পরই ১৯৮৮ সালে সেনার কাজ থেকে বরখাস্ত করা হয় ওমপ্রকাশকে।
১৯৯২ সালে ভিওয়ানিতে এক বাইকআরোহীর সর্বস্ব লুট করার চেষ্টা করেন ওমপ্রকাশ ও তাঁর এক সঙ্গী। কিন্তু বাইকআরোহী বাধা দেওয়ায় তাঁকে খুনের অভিযোগ ওঠে ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই পুলিশের নজরে ছিলেন তিনি।
এই ঘটনার পর নিজেকে বাঁচাতে হরিয়ানা থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রথমে তামিলনাড়ু এবং পরে অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কয়েকটি মন্দিরে এক বছর ধরে আত্মগোপন করে ছিলেন ওমপ্রকাশ। ওমপ্রকাশের হদিস না পেয়ে পুলিশ তাঁকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ঘোষণা করে।
এক বছর ধরে তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে থাকার পর পরের বছর উত্তরপ্রদশের গাজিয়াবাদে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে গাড়িচালকের কাজ নেন। এবং সেখানেই পাকাপাকি ভাবে থাকা শুরু করেন।
গাজিয়াবাদে নিজেকে বজরঙ্গবলী, বজরঙ্গী হিসেবে পরিচয় দেন ওমপ্রকাশ। এর পর ১৯৯৭ সালে স্থানীয় মহিলা রাজকুমারীকে বিয়ে করেন তিনি।
ট্রাক চালানোর পাশাপাশি ভিডিয়ো ক্যাসেটের একটি দোকানও খোলেন। এলাকায় নিজেকে প্রাক্তন সেনাকর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়ায়, স্থানীয়রা তাঁকে ‘ফৌজি তাউ’ নামে ডাকতেন।
২০০৭ সাল থেকে স্থানীয় হিন্দি ছবিতে ছোট ছোট অভিনয়ের কাজও শুরু করেন। কখনও পঞ্চায়েত প্রধান, কখনও খলনায়ক, কখনও পুলিশ, এ রকম নানা ভূমিকায় অভিনয় করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৫ বছর ধরে ২৮টি আঞ্চলিক ছবিতে কাজ করেছেন ৫-৬ হাজার টাকার বিনিময়ে। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল— ‘টকরাও’, ‘দাবাং ছোঁড়া ইউপি কা’, ‘ঝটকা’, ‘মা বাপ কি ভুল’, ‘পাঁচ কুয়াঁরিয়া’। সম্প্রতি একটি ছবির শ্যুটিংও করছিলেন ওমপ্রকাশ।
পুলিশ জানিয়েছে, খুনের অভিযোগ ওঠার পরই পানিপতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেন ওমপ্রকাশ। প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। প্রথম পক্ষের একটি মেয়েও রয়েছে ওমপ্রকাশের।
ওমপ্রকাশের দ্বিতীয় পক্ষের দুই মেয়ে এবং একটি ছেলে। সাত বছর ধরে কখনও দিনমজুর, কখনও ট্রাক চালক, কখনও টেম্পো চালানোর কাজ করেছেন। পরে ছবিতে অভিনয় করা শুরু করেন।
গত বছর থেকে হরিয়ানা পুলিশের এসটিএফ রাজ্যের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধীদের মামলার তদন্ত শুরু করে। সেই তালিকায় ওমপ্রকাশেরও নাম ছিল। ২৮ বছর আগের মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ওমপ্রকাশ ভেবেছিলেন, দু’দশকেও পুলিশ যখন খোঁজ পায়নি, তা হলে বিশেষ বিপদ নেই।
পুলিশ জানিয়েছে, মাস দুয়েক আগে পানিপতে গ্রামের বাড়িতে ভাইকে হোয়াটসঅ্যাপ কল করেন ওমপ্রকাশ। সেখান থেকেই নম্বর জোগাড় করে ওমপ্রকাশের গতিবিধির উপর নজরদারি চালাতে শুরু করে পুলিশ। তারা জানতে পারে, গাজিয়াবাদে অন্য পরিচয়ে সংসার পেতেছেন ওমপ্রকাশ। গত সোমবারই তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।