হর্ষবর্ধন শ্রিংলা
বাবা হিন্দু, মা বৌদ্ধ। দার্জিলিং নিবাসী এই সিকিমি সন্তানের নাম রাখা হয়েছিল হর্ষবর্ধন শেরিং লা। খটোমটো ঠেকায় মুম্বইয়ের স্কুল সেই পদবি পাল্টে করে দেয় শ্রিংলা!
সেই থেকে এই পদবিতেই পরিচিত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আজ নতুন বিদেশসচিব হিসাবে কাজ শুরু করলেন। দায়িত্ব নিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপাতত সামনে একাধিক গুরুদায়িত্ব। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সংযোগ বাড়ানো, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে দ্ব্যর্থহীন, সম্মিলিত পদক্ষেপ করা— বিদেশসচিব হিসাবে আমার আশু কাজের মধ্যে পড়ছে।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘বিদেশ মন্ত্রকে যখন যোগ দিই, তখন ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। আজ যখন বিদেশসচিবের অফিসে ঢুকছি, বিশ্ব উষ্ণায়ন একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। নতুন দরজা যেমন খুলেছে, তৈরি হয়েছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জও। সাইবার ক্ষেত্র-সহ নতুন প্রযুক্তি নিয়েও আমাদের ভাবনাচিন্তা করতে হবে।’’
বাংলাদেশ এবং ওয়াশিংটনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফল দৌত্য সেরে আসা হর্ষবর্ধনের পদবি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বার বারই দেখা গিয়েছে কৌতূহল ও আগ্রহ। সম্প্রতি সিকিমের আইসিএফএআই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্মানিক ডক্টরেট নিতে নিতে গিয়ে যে বক্তৃতা দেন শ্রিংলা, তার অনেকটাই নেপালিতে। বলেন, ‘‘আমার ভাষা নেপালি, যা সিকিমেরও একটি ভাষা।’’
আরও পড়ুন: ‘সার্বভৌমত্ব’ নিয়ে কথায় রাজি পরেশ
কূটনৈতিক মহলে খবর, ১৯৮৪ ব্যাচের এই বিদেশ মন্ত্রকের আমলাটিকে তাঁর চাকরি জীবনে এমন একটি জটিলতার সামনে পড়তে হয়, যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে যুঝতে না পারলে, তাঁকে হয়তো অকালেই বিদায় নিতে হত। ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী মিশনে তখন কর্মরত শ্রিংলা। ইরাকের ‘তেলের বদলে খাদ্য’ প্রকল্পে বিশাল অঙ্কের ঘুষের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্ত করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। নিউ ইয়র্কের সংশ্লিষ্ট শিবিরে যোগাযোগের সূত্রে এক হাজার শব্দের ওই রিপোর্ট আগেই হাতে পান শ্রিংলা। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রণেন সেনকে সঙ্গে সঙ্গে জানান , তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহের নাম রয়েছে ওই রিপোর্টে। বিদেশ মন্ত্রককে কিছু না জানিয়ে রণেন সেন সে সময় সরাসরি যোগাযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে। পদত্যাগ করানো হয় নটবরকে।
বিদেশ মন্ত্রকে দুর্নীতির অভিযোগ খুবই দুর্লভ। কিন্তু আরও একটি গোলমেলে পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নিতে হয়েছিল বর্তমান এই বিদেশ সচিবকে। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সে দেশে ৫০ হাজার আবাসন প্রকল্পে হাত দিয়েছিল ভারত। সে সময় বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের বিরুদ্ধে ওই প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন শ্রীলঙ্কার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় যুগ্মসচিব। ওই চাপানউতোরের মধ্যেই শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের দায়িত্বে আনা হয় শ্রিংলাকে। যিনি বিতর্ক সরিয়ে সফল ভাবে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ করেন শুধু তাই-ই নয়, তাঁর সময়েই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ ভাল হতে থাকে। নরেন্দ্র মোদীর আজকের প্রতিবেশী নীতির সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসাবেই যাকে দেখা হয়।