হার্দিকের বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র।
টানা ১০ বছর আনন্দীবেন পটেল রাখি পাঠিয়েছেন আমাকে। প্রচার করতেন আমার জিপে চড়েই। আমিই জিপ চালাতাম। বছরের পর বছর আমরাই বিজেপিকে জিতিয়েছি— এক টানা কথা বলে শ্বাস নিলেন ভরতভাই পটেল।
ভরতভাইকে না চিনলেও তাঁর ২৩ বছরের ছেলেকে সকলেই চেনে। হার্দিক পটেল। গুজরাতে বিজেপির ত্রাস। তাঁর ইশারায় পাতিদার ভোট বিজেপির থেকে কংগ্রেসের ঝুলিতে পড়লেই গুজরাতে ২২ বছরের রাজত্বে দাঁড়ি পড়ার আশঙ্কা।
ছেলে নেতা হয়ে ওঠার পরেই ভরতভাই ভোল পাল্টেছেন। এক সময়ের বিজেপির সক্রিয় কর্মী এখন ছেলের সিডি-কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ উঠতে লঙ্কার আচার মাখানো ফাফড়ায় কামড় দিয়ে মুখ লাল করে বলেন, ‘‘বিজেপি হারবে বুঝে ভয় পেয়ে এ সব করছে। লাভ হবে না।’’
শুধু ভরতভাই কিংবা হার্দিকের মা ঊষাদেবীই নন, তাঁর কাকা-জ্যাঠা-সহ গোটা পরিবারই বিজেপির মিটিং-মিছিলে যেতেন। তাঁরাই এখন বিজেপির ঘোর বিরোধী। কিন্তু পরিবার যে ভাবে পাল্টেছে, পাতিদার সমাজ সে ভাবে ভোল বদলাবে কি? সেটাই হার্দিকের চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: জেএনইউয়ে বাতিল বাবরি-আলোচনা
পাতিদাররা এত দিন বিজেপির সঙ্গেই ছিল। পাতিদারদের মধ্যে স্বচ্ছল, প্রভাবশালী লেউভা পটেলরা তো বটেই। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা, চাষাবাদ বা ছোট ব্যবসায় জড়িত কড়ভা পটেলরাও। হার্দিকরা কড়ভা পটেল। কিন্তু পাতিদারদের মধ্যে কড়ভাদের ভাগ মাত্র ৩০%। লেউভা-কড়ভা, দুই সম্প্রদায়েরই যুবকেরা তাঁর ভক্ত। সুরাত থেকে রাজকোট— লক্ষ লক্ষ যুবক হার্দিকের সভায় আসছেন।
কিন্তু প্রবীণেরা সকলেই কি হার্দিকের কথা শুনবেন? অমদাবাদ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বিরামগাঁওয়ে হার্দিকের বাড়ি। সেখানে প্রতিবেশী হিতেন্দ্র পটেলের বললেন, ‘‘অনেকেই তো বিজেপির থেকে উপকার পেয়েছে। চট করে অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়াটা কঠিন।’’ প্রচারের সুবিধার জন্য বিরামগাঁও থেকে হার্দিক এখন অমদাবাদে শীলজ-এ ঝাঁ চকচকে ট্রেজার এনক্লেভে ভাড়ার ফ্ল্যাটে। সেই ফ্ল্যাটের নীচে কড়া পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই জওয়ান। বসার ঘরে দেওয়াল জুড়ে হার্দিকের নানা কর্মকাণ্ডের ছবি। সে দিকে তাকিয়ে ছেলের অপেক্ষায় মা ঊষাদেবী। ভরতভাই-ঊষার একটাই স্বপ্ন— এক দিন তাঁদের ছেলে ‘বড়াপ্রধান’ হবে। গুজরাতিতে যার অর্থ, প্রধানমন্ত্রী।