এক ছেলেকে হারিয়েছেন গাড়ি দুর্ঘটনায়। আর এক জন বুড়ো বাবার ‘বোঝা’ বইবেন না বলে নিজেই ছেড়ে চলে গিয়েছেন সেই কবে।
শতবর্ষ পেরনো বৃদ্ধ বয়সের দ্বিগুণ ভার বয়ে তাই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বড় ছেলের দুই সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব যে তাঁরই উপর।
হরবংশ সিংহের জন্ম অবিভক্ত ভারতের লাহৌরে। ১৯২০ সালে লাহৌরের স্রান মুঘল থানে ওয়ালি গ্রামে তাঁর জন্ম হয়।
এই গ্রামেই মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে বড় হয়েছিলেন তিনি। তার পর যখন ২৭ বছরে পা দিলেন সব কিছুই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল তাঁর।
ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল পাকিস্তান। প্রাণ বাঁচাতে ভিটে মাটি ছেড়ে মা-বাবার হাত ধরে রওনা দিলেন ভারতে।
প্রথমে কার্নাল জেলায় থাকতে শুরু করেন। তার পর সেখান থেকে পঞ্জাবের মোগা।
কোনও দিন খাবারের জন্য কারও উপর নির্ভর করে থাকেননি। ‘কর্মই ধর্ম’ বিশ্বাস রাখা হরবংশ সারা জীবন নিজের অন্ন নিজেই জুটিয়ে নিয়েছেন।
অনেক টালমাটালের পর জীবন থিতু হয়েছিল তাঁর। উপার্জন কম হলেও সংসার পেতেছিলেন। সংসার নিয়ে সুখীও ছিলেন। দুই ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে ভালই দিন কাটছিল তাঁর।
কিন্তু বেশি দিন সুখ সহ্য হল না হরবংশের। এক দুর্ঘটনায় বড় ছেলের মৃত্যু হল। বড় ছেলের তরফে দুই নাতির দায়িত্ব এসে পড়ল তাঁর ঘাড়েই।
পরিবারের খরচ বাড়ছে দেখে আলাদা সংসার পেতে ফেললেন ছোট ছেলেও। বাধ্য হয়েই বুড়ো হাড়ে ফের উপার্জনের রাস্তায় নামতে হল তাঁকে।
নাতিদের খাওয়া, পরা, পড়াশোনা সবেরই খেয়াল রাখছেন ১০০ বছরের এই বৃদ্ধ।
রোজ সকাল হলেই ঠেলা গাড়িতে আলু-পিঁয়াজ বোঝাই করে বেরিয়ে পড়েন তিনি। ১০০ বছরের বৃদ্ধ ২০০ কিলোর ঠেলা ঠেলে পৌঁছে যান মোগার বিভিন্ন প্রান্তে।
অতিমারির সময়েও প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে চলেছেন তিনি।
মরতে ভয় পান না বলে জানিয়েছেন হরবংশ। নাতিদের মুখ চেয়ে, তাদের ভার বহন করে চলেছেন আজও। এখনও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, আরও অনেক বছর বাঁচতে হবে যে তাঁকে।