Hafeez Saeed

হাফিজ়ের ‘শাস্তি’কে পাত্তা দিচ্ছে না দিল্লি

পাঁচ দিন আগে লাহৌরের সন্ত্রাস দমন আদালতের রায়ে লস্কর ই তইবার প্রধান হাফিজ সইদের সন্ত্রাসবাদে পুঁজি জোগানোর অপরাধে ১০ বছরের সাজা সম্পর্কে এমনটাই মন্তব্য করছেন দিল্লির কূটনীতিকরা।

Advertisement

অগ্নি রায় 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৩২
Share:

হাফিজ সইদ।

এক নৃশংস ‘সিরিয়াল কিলার’কে শাস্তি দেওয়া হয়েছে ‘পকেটমারি-র জন্য!

Advertisement

পাঁচ দিন আগে লাহৌরের সন্ত্রাস দমন আদালতের রায়ে লস্কর ই তইবার প্রধান হাফিজ সইদের সন্ত্রাসবাদে পুঁজি জোগানোর অপরাধে ১০ বছরের সাজা সম্পর্কে এমনটাই মন্তব্য করছেন দিল্লির কূটনীতিকরা। পাশাপাশি এটাও মনে করা হচ্ছে, তার কারাদণ্ডের খবরে সাউথ ব্লকের উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণই নেই। ভারতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানের নিরাপদ আশ্রয়ে বাড়ছে অন্যান্য কুশীলবেরা। হাফিজ়ের এই সাজাও বর্তমান অবস্থা সামলানোর জন্য মাত্র। অদূর ভবিষ্যতে হাওয়া বুঝে তাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

এক কূটনৈতিক কর্তার মতে, “২০০৮-এর নভেম্বরে মুম্বইয়ে ওই ভয়ঙ্কর হামলা চালানোর পিছনে হাফিজ়ের ভূমিকা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও প্রমাণ আমরা বিস্তারিত ভাবে ইসলামাবাদের হাতে দিয়েছি। তা নিয়ে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে শাস্তি তাকে দেওয়া হয়েছে, তা সন্ত্রাসে অর্থ জোগানোর জন্য। তা-ও এটা এফএটিএফ-এর চাপে পড়ে ধূসর তালিকা থেকে বেরোনোর পন্থা হিসেবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মানুষের পিছনে ঝাঁপ, পালাল রয়্যাল বেঙ্গল

ঘটনা হল, মুম্বইয়ে ২৬/১১-র হামলার পনেরো দিনের মধ্যে আমেরিকার চাপে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ হাফিজ় এবং তার কিছু সহযোগী জঙ্গিকে নিষিদ্ধ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সেটাও ছিল নেহাতই রক্তাক্ত ভারতকে সাময়িক স্তোক দেওয়ার জন্য, যাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও সামরিক প্রত্যাঘাত নয়াদিল্লি না করে। কারণ সে সময় ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষ বাধলে এবং তাতে আমেরিকার পাল্লা ভারতের দিকে দৃশ্যত ভারী থাকলে, যে সামান্য কাবুল-সহযোগিতা ওয়াশিংটন পাচ্ছিল, সেটাও বন্ধ করে দিত ইসলামাবাদ।

বিষয়টি সে সময় ধামাচাপা দেওয়া হয়। এর পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে কিছুটা খেলা ঘুরে যায়। কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত রূপায়নের জন্য ট্রাম্পের প্রয়োজন হয় পাক সহযোগিতা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি ও তাঁর প্রশাসন এফএটিএফ-এর উপর প্রভাব খাটিয়ে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় পাঠান। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্বল ও ভঙ্গুর ইসলামাবাদকে চাপের মধ্যে রাখার জন্য এটাকেই সেরা পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, হাফিজ় সইদের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা তত দিনে আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে পাক সেনা এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর কাছে। বরং আন্তর্জাতিক নজরদারির সামনে (বিশেষত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ এবং এফএটিএফ) হাফিজ় পাক সরকারের বোঝা হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে তার সংগঠনকে জাতীয় নির্বাচনের মূলস্রোতে আনার চেষ্টাও করেছিল পাক সেনা। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয় হাফিজ়।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, হাফিজ়কে শাস্তি দিয়ে এক ঢিলে দু’টি পাখি মারার কৌশল নিয়েছে ইমরান খানের সরকার। প্রথমত, সন্ত্রাসবাদ দমনে নিজেদের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে উজ্জ্বল করার চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, ভারতের পাক-বিরোধী অভিযোগকে ভোঁতা করে দেওয়া। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ধূসর তালিকা থেকে পাকিস্তান বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা, তা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করছে দোহায় তালিবানের সঙ্গে আশরাফ ঘানি সরকারের (আমেরিকা সমর্থিত) সফল দৌত্য এবং শান্তিসূত্রের উপর। আমেরিকা এটাও জানে যে, ইসলামাবাদের সাহায্য ছাড়া ঘানি প্রশাসন একক ভাবে তালিবানের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না। তাই ট্রাম্পের পর জো বাইডেন আমেরিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করলেও পাক নির্ভরতা পুরোপুরি কমবে না হোয়াইট হাউসের।

আরও পড়ুন: কাবুলকে বার্তা দিল্লির

পাকিস্তান এই সুযোগটির জন্যই অপেক্ষা করছে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। তারই মধ্যে তারা আপাতত হাফিজ়কে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে এফএটিএফ-এর সুনজরে আসার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি নিঃশব্দে জইশ ই মহম্মদের নেতা মাসুদ আজহারকে শান দিয়ে ভারতে হামলার জন্য প্রস্তুত করবে। লস্কর এর অন্যতম নেতা জাকিউর রহমান লকভিও ভারত-বিরোধী অস্ত্র হিসেবে পাক সেনার অন্যতম পছন্দের তালিকায় রয়েছে বলে মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement