অমদাবাদ কাঁপিয়ে মিছিল হার্দিকের

নাচ বন্ধ রেখে মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের ‘বাইট’ দিচ্ছেন পাতিদার নেতারা। যুবকই সিংহভাগ। অসংখ্য মহিলাও রয়েছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। হরির লুঠের মত বিলোচ্ছে হার্দিক পটেলের ছবিওয়ালা জার্সি এবং সাদা টুপি। যাতে লেখা ‘জয় পাতিদার’। বিলোচ্ছে হার্দিকের মুখওয়ালা রঙিন স্কার্ফও।

Advertisement

অগ্নি রায়

অমদাবাদ শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৬
Share:

এক সময়ে সচিন রমেশ তেন্ডুলকর বাইশ গজের দিকে হেঁটে গেলে এই ছন্দে বজ্রগর্জন হত!

Advertisement

যেমনটা দেখছি দুধ সাদা এসইউভি-টি অমদাবাদের প্রান্তে খেরিয়া মাতা মন্দিরে ঢোকার সময়। আবালবৃদ্ধ বণিতার গণউন্মাদনা ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছেছে। একযোগে শ্লোগানের মত ধ্বনি— ‘‘হার্দিক, হার্দিক, হার্দিক…।’’

কেন যে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্বের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন ২৪ বছরের এই যুবক, তা দিল্লিতে বসে বোঝা সত্যিই অসম্ভব। আজ প্রথম রোড শো করলেন অমদাবাদে। যে যে রাস্তা দিয়ে গেলেন, সেখানে কার্যত অচল হয়ে রইল জনজীবন। অথচ এটি তো সেই অর্থে পাতিদারদের গড় নয়। এখানকার ১৩টি নির্বাচনী ক্ষেত্রের অন্তত ১০টিতে বিজেপি-র প্রবল আধিপত্য ছিল গত নির্বাচনেও।

Advertisement

“অনেক নেতাই আমাদের সম্প্রদায় থেকে উঠে এসেছেন। কিন্তু হার্দিকের মত এত সাহস নিয়ে লড়াই কেউ চালিয়ে যেতে পারেননি,” বলছেন ধ্রুব পটেল। সকাল থেকেই মন্দিরের সামনে জমায়েতে চলেছে উদ্দাম নাচ আর গান। সামাজিক আন্দোলনের এক উদ্দাম বহিঃপ্রকাশ। নাচ বন্ধ রেখে মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের ‘বাইট’ দিচ্ছেন পাতিদার নেতারা। যুবকই সিংহভাগ। অসংখ্য মহিলাও রয়েছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। হরির লুঠের মত বিলোচ্ছে হার্দিক পটেলের ছবিওয়ালা জার্সি এবং সাদা টুপি। যাতে লেখা ‘জয় পাতিদার’। বিলোচ্ছে হার্দিকের মুখওয়ালা রঙিন স্কার্ফও।

“সংরক্ষণ আমরা আদায় করেই ছাড়ব। হার্দিক তো কোনও রাজনৈতিক পদের জন্য এই আন্দোলন করছেন না। ভোটেও দাঁড়াননি। উনি আমাদের সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছেন।’’ — অনবরত স্লোগানের মধ্যে আরও গলা তুললেন জগদীশ্বর পটেল। “শুধু কি সংরক্ষণ? আমাদের উপর কম অন্যায় করেছে এই সরকার? এই অমদাবাদে ১৪ জন পাতিদারকে গুলি করে মেরেছে পুলিশ। আজও এক জনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের মহিলাদেরও অনেক বার অপমান করা হয়েছে। সরকার চুপ করে থেকেছে।”

আর কথা বলা অসম্ভব। কারণ হার্দিক এসে গিয়েছেন। উন্মত্ত ভিড় ঠেলে তাঁর গাড়ি সোজা পৌঁছে গিয়েছে মন্দিরে। বাইরে প্রবল ধাক্কাধাক্কি। ভিতরে আরতি সারলেন পাতিদার নেতা। তারপর এসইউভি এবং মোটর বাইকের মিছিলটি শুরু করল পরিক্রমা। উড়ছে নীল পতাকা। সঙ্গে চলছে ‘ডি জে বাস’, যাতে চলছে লাউড স্পিকারে পাতিদার সঙ্গীত। স্লোগান এ বার বদলে অনেক আক্রমণাত্মক — ‘‘দেখো দেখো কৌন আয়া। মোদী তুমহারা বাপ আয়া।’’

মিছিল এগিয়ে যেতে সুনসান চত্বর। পাশেই জয় অম্বে পান পার্লার। গত তিরিশ বছর ধরে পান বিক্রি করছেন যিনি তিনিও পটেল। অপসৃয়মান পরাক্রান্ত বাইক মিছিলের দিকে তাকিয়ে কিছুটা স্বগতোক্তির মত করেই বললেন বিক্রেতা গুলাব পটেল, “ছেলেটার সাহস আর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা সত্যিই ভাল। কিন্তু কি জানেন, এই আন্দোলনের মুখ যেন কিছুটা পাল্টে গিয়েছে রাজনৈতিক সমঝোতায়। মূল লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন স্বার্থ সিদ্ধির খেলা চলছে।”

যে আবেগ চোখে দেখলাম সেটা, নাকি ওই প্রবীণ মানুষটির সংশয় — কোনটা শেষপর্যন্ত সত্যি হবে? তা জানার জন্য গুজরাতবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে ১৮ ডিসেম্বর ভোটের ফল ঘোষণা পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement