প্রাসাদ: প্রস্তাবিত গুজরাত সদনের মডেল।
ভোটের উত্তাপ বাড়ছে গুজরাতে। দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরের ঠিক উল্টো দিকে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে গুজরাত সদনের। বিজেপির উদ্যোগে।
অশোক রোড আর আকবর রোড। দিল্লির এই দুই পথ সকলে চেনেন মূলত বিজেপি আর কংগ্রেসের দৌলতেই। অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতর। আর আকবর রোডে কংগ্রেসের। সনিয়া গাঁধীর বাড়ির নম্বর দশ জনপথ হলেও সেখানে ঢোকার পথ আকবর রোড দিয়েই। ঠিক কংগ্রেসের সদর দফতরের পাঁচিল ঘেঁষেই। কখনও কংগ্রেস দফতরে বৈঠক করতে হলে পাশের বাড়ির একটি ছোট্ট দরজা দিয়েই সেখানে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন সনিয়া। মনমোহন সিংহের জমানায় এই বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে আকবর রোডেই ছিল ‘জাতীয় উপদেষ্টা পর্ষদে’র দফতর। রাস্তা পার হয়েই অনেক সময় হেঁটে সেখানে যেতেন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সনিয়া।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর অশোক রোডের সব বাংলোগুলি কব্জা করেছেন বিজেপির মন্ত্রী-সাংসদেরা। এ বারে আকবর রোডেও থাবা বসাচ্ছে বিজেপি। ‘জাতীয় উপদেষ্টা পর্ষদ’-এর বাড়িটা এখন বরাদ্দ হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর নামে। আর কংগ্রেসের সদর দফতরের ঠিক উল্টো দিকে একটি খালি জমিতে এখন তৈরি হচ্ছে প্রাসাদের মতো গুজরাত সদন। অশোক রোড হোক বা আকবর রোড— এই অঞ্চলে বাংলোগুলো সাধারণত একতলাই হয়। কিন্তু গুজরাত সরকারের যে নতুন সদন তৈরি হচ্ছে, সেটি কমপক্ষে সাততলার!
আরও পড়ুন: গুজরাত জয়ে তিন তুর্কিই তাস রাহুলের
ক’দিন আগেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণি দিল্লি এসে এই নতুন সদনের শিলান্যাস করে গিয়েছেন। গুজরাত সরকারের সূত্রের বক্তব্য, ১৮ মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হয়ে যাবে। দিল্লিতে ইতিমধ্যেই গুজরাত ভবন রয়েছে। লোকসভা ভোটে জেতার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানেই থাকতেন নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ও দিল্লি এলে মোদীর ঠিকানা হতো ওই ভবনটি। কিন্তু এখন গুজরাত থেকে দিল্লিতে অতিথিদের চাপ বাড়তে থাকায় আর একটি ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি সরকার। কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনবিসিসি তৈরি করছে ভবনটি।
প্রায় ৭ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে এই নতুন সদন বানাতে খরচ হবে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। আগরা আর ঢোলপুর থেকে বিশেষ পাথর আনা হচ্ছে। প্রায় ৭০টি ঘর ছাড়াও থাকছে সেমিনার হল, লাউঞ্জ। কিন্তু এই পেল্লাই ভবনটি নির্মাণের জন্য কংগ্রেসের সদর দফতরের ঠিক উল্টো দিকের জমিটি বেছে নেওয়ার পিছনে রাজনীতিরই গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘এটিও আসলে নিজের শক্তি দেখানোর বার্তা। অবশ্য নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে এটি মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়।’’
রসিক নেতাটির ব্যাখ্যা, সাম্প্রতিক অতীতে নজির আছে, দিল্লিতে নতুন সচিবালয় তৈরি করেও শীলা দীক্ষিত তা ভোগ করতে পারেননি, সেটি ভোগ করছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব যে নতুন মুখ্যমন্ত্রী দফতর বানিয়েছেন, সেটি এখন যোগী আদিত্যনাথের কব্জায়। সেখানে আবার গেরুয়া রং হচ্ছে। ওই নেতার কথায়, ‘‘এমন হবে না তো, নতুন প্রাসাদ বানাচ্ছে বিজেপি, কিন্তু গুজরাতে পালাবদলের পরে সেটি ভোগ করবে কংগ্রেস?’’