মদ বিক্রি তো দূরের কথা, গুজরাতে বহু বছর ধরে তা পান করাও নিষিদ্ধ। কিন্তু, এত সব বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সোমবার চূড়ান্ত মদ্যপ অবস্থায় বিমানবন্দরে হাজির হওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে। ফলে বিমানে উঠতে বাধা পেয়ে ফিরে আসতে হল তাঁকে। সপরিবার ছুটি কাটাতে গ্রিসে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই মতো গত সোমবার ভোরে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন মধ্য তিরিশের জয়মন। কিন্তু, ছুটি কাটাতে যাওয়া তো দূরের কথা, বিমানেই উঠতে পারলেন না গুজরাতের উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেলের ছেলে জয়মন পটেল।
বিমান সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, চূড়ান্ত মত্ত অবস্থায় বিমানবন্দরে এসেছিলেন জয়মন। সে কারণেই তাঁকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি। যদিও গুজরাতের উপমুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এ সবই বিরোধীদের রটানো গুজব।
তবে জয়মন কী ভাবে ওই বিমানবন্দরে মদ্যপান করে গেলেন তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কারণ, দেশের একাধিক রাজ্যের মতো গুজরাতেও মদ্যপান নিষিদ্ধ।
ঠিক কী হয়েছিল?
মেয়ে বৈষ্ণবী ও স্ত্রী ঝলককে নিয়ে ওই দিন ভোরে আমদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছন জয়মন। ভোর ৪টে নাগাদ কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়ানে তাঁর গ্রিস যাওয়ার কথা ছিল। ওই বিমান সংস্থার কর্মীদের কর্মীদের অভিযোগ, জয়মন এতটাই মদ্যপ ছিলেন যে তিনি ঠিক মতো হাঁটতেও পারছিলেন না। তাঁকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি চেকিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
মদে মানা কোন কোন রাজ্যে?
• গুজরাত, কেরল, বিহার, নাগাল্যান্ড এবং মণিপুর-সহ কেন্দ্রশাষিত অঞ্চল লক্ষদ্বীপে মদ নিষিদ্ধ।
• ১৯৬০ থেকে গুজরাতে মদ প্রস্তুত করা, পান করা এবং তা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
• তবে গুজরাতে বেড়াতে আসা বিদেশি নাগরিক বা অনাবাসী ভারতীয়দের মদ কেনার জন্য ৩০ দিনের পারমিট রয়েছে।
• এক সময় দেশের মধ্যে গুজরাতই একমাত্র রাজ্য ছিল যেখানে মদ প্রস্তুত বা বিক্রি করলে তাতে ফাঁসির সাজা দেওয়া হত।
তবে ২০০৯ সালে আইন করে ওই সাজা তুলে নেওয়া হয়।
• এর আগে অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা, মিজোরাম এবং তামিলনাড়ুতে মদ নিষিদ্ধ ছিল। পরে যদিও সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।
আরও পড়ুন
নতুন করে বিপদে পড়লেন লালু প্রসাদ
সেখানে তাঁর চেকিংয়ের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, জয়মনকে বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না। এর পরই রাগে ফেটে পড়েন জয়মন। সংস্থার কর্মীদের সঙ্গেও তর্ক জুড়ে দেন তিনি। তবে তাতেও কাজ না হলে শেষমেশ বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসেন জয়মন।
ঘটনার পরই ছেলের পক্ষে আসরে নামেন গুজরাতের উপমুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যায় এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বিবৃতিও দেন তিনি। জয়মন মত্ত ছিলেন না বলে দাবি করে তিনি বলেন, “বৌমা-নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল জয়মন। কিন্তু, অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।” গোটা ঘটনাটা নিয়ে নিতিনের অভিযোগ, “বিরোধীরা আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এ রকম মিথ্যা রটনা করছে।”
উড়ানে এক বিমানকর্মীকে চটিপেটা করে গত মার্চে শিরোনামে এসেছিলেন শিবসেনা সাংসদ রবীন্দ্র গায়কোয়াড়। এ বার মদ্যপ অবস্থায় বিমানবন্দরে আসার অভিযোগে ফিরিয়ে দেওয়া হল গুজরাতের উপমুখ্যমন্ত্রীর ছেলে জয়মন পটেলকে।