রেহনা সুলতানা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন ২০১৭ সালে। ডিলিটও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’বছর আগের সেই পোস্টের জেরেই বিপাকে অসমের গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মহিলা গবেষক। রেহানা সুলতানা নামে ওই গবেষকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। দু’বছর আগে ডিলিট করার পরেও একটি পোস্টের জেরে সম্প্রতি দায়ের হওয়া মামলায় কার্যত হতভম্ব ওই গবেষক। যদিও রেহানার দাবি, অসমের নাগরিকপঞ্জি সংক্রান্ত কাজকর্মে যুক্ত থাকার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে পুলিশ।
ওই গবেষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাকিস্তানকে সমর্থনসূচক একটি পোস্ট তিনি করেন। বছর দুয়েক আগে ওই পোস্টটি যে তিনি করেছিলেন, সে কথা স্বীকার করেছেন রেহনা। পাশাপাশি এটাও দাবি করেছেন যে, ওই পোস্ট করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, ভুল হয়েছে। তাই সেটি ডিলিট করে দিয়েছিলেন। সেটা ২০১৭ সালের ঘটনা। তা ছাড়া পাকিস্তানকে সমর্থন করে কোনও কিছু লেখেননি, বরং ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে হতাশ হয়েই তিনি ওই পোস্ট করেছিলেন— দাবি করেছেন রেহানা। তাঁর ওই পোস্টের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন রেহনা।
কী ছিল সেই পোস্টে? স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের দাবি রেহানা লিখেছিলেন, ‘‘পাকিস্তানের জয়কে উদযাপন করতে আজ গোমাংস খেলাম। আমি কী খাব, সেটা নির্ভর করে আমার কী খেতে ভাল লাগে, তার উপর। কিন্তু গোমাংসের কথা শুনে বিতর্ক তৈরি করবেন না।’’ পাকিস্তানের জয় বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন? রেহানার দাবি, ‘‘২০১৭ সালের জুন মাসে ভারত-পাকিস্তানের একটি ম্যাচ হয়েছিল। বিরাট কোহালি কোনও রান করতে পারেননি। এবং ম্যাচটা পাকিস্তান জিতেছিল। ভারতীয় ক্রিকেটের একজন ফ্যান হয়ে হারের হতাশা থেকেই ওই পোস্ট করেছিলাম।’’
কিন্তু দু’বছর আগের সেই পোস্ট এখন কী ভাবে সামনে এল? গুয়াহাটি পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় একটি খবরের ওয়েবাসাইটে সম্প্রতি ওই পোস্ট নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়েছিল, সম্প্রতি ইদ-উল-আজহা উপলক্ষে রেহনা ওই পোস্ট করেছেন। সেই খবরের সূত্র ধরেই রেহনার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেবশ্রী-পর্ব দুঃস্বপ্ন, তা ভুলে যান, শোভনদের বার্তা শিব প্রকাশের, রাখি বাঁধলেন বৈশাখী
আরও পড়ুন: রাইফেল দিয়ে পথকুকুরের মাথায় গুলি করে খুন! ধৃত মানবাধিকার কর্মী, প্রতিবাদে পশুপ্রেমীরা
অসম পুলিশের ডিজি কুলধর সইকিয়া জানিয়েছেন, গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার নিজে ঘটনার তদন্ত করছেন। ডিজি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া যাতে ঘৃণা বা ভুয়ো খবর ছড়ানোর মাধ্যম না হয়ে ওঠে, আমরা তার চেষ্টা করছি। পুলিশকে বিষয়টির উপর কড়া নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।
কাকতালীয় ভাবে অসমে এনআরসি-র বিরুদ্ধে একটি কবিতা শেয়ার করেছিলেন রেহনা। সেই ঘটনায় যে ন’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল, তাতে রেহনার নামও ছিল। সেই সূত্র ধরেই রেহনা বলেন, প্রকৃত ভারতীয়রা যাতে নাগরিকপঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, তার জন্য তিনি কাজ করেন। শুনানিতে তাঁদের সাহায্যও করেন তিনি। তাঁর সেই কাজে তাঁর মনোবল নষ্ট করতেই এই ঘটনা টেনে আনা হচ্ছে।’’