নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই
পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিজেপিশাসিত গুজরাতের আপত্তিতে আপাতত স্থগিত হয়ে গেল পোশাকের উপরে জিএসটি ৫ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত। শুক্রবার জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্ত, এখন পোশাকের উপরে জিএসটি-তে আগের হারই বজায় থাকছে। ১ জানুয়ারি থেকে যে নতুন হারে পণ্য-পরিষেবা কর ধার্য হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না।
তৈরি পোশাকে, বিশেষত ১০০০ টাকার কম দামের পোশাকে জিএসটি বাড়ানো হলে, আমজনতার উপরে বোঝা চাপবে। বস্ত্র শিল্পের ছোট কারখানাও এর ধাক্কা সামলাতে না পেরে ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হবে। অনেক কারখানা করের বোঝা এড়াতে অসংগঠিত ভাবে ব্যবসা চালাতে চাইবে। মূলত এই তিন আশঙ্কা থেকেই আজ পোশাকে জিএসটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
এক দিকে, ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ। অন্য দিকে, পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে কম দামের জামাকাপড়ের উপরে কর বাড়ানো থেকে বিরত থাকার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। মূলত এই দুই কারণেই করের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত বলে ধারণা অনেকের। এই সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে ওই প্রস্তাব পুরোপুরি তুলে না নেওয়ায় উদ্বেগ কমেনি বলে জানিয়েছে তৈরি (রেডিমেড) জামাকাপড় শিল্প সংগঠন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোশাকে জিএসটি বাড়ানোর বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রও এ বিষয়ে সরব হন। গত সেপ্টেম্বরে লখনউয়ে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক তখন তাতে কান দেয়নি। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, পোশাকের ক্ষেত্রে মূল পণ্যের থেকে কাঁচামালে জিএসটির হার বেশি। এর ফলে মূল পণ্যের দাম আখেরে বেড়েই যায়। তা ছাড়া, জিএসটি আদায়ের থেকে কাঁচামালে মেটানো কর বেশি পরিমাণে ছাড় দিতে হয়। তাতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়।
একই যুক্তিতে জুতো-চপ্পলের জিএসটিও বাড়ানো হয়েছিল। আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের তরফে জুতো-চপ্পলে জিএসটি বাড়ানোর সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার দাবি তোলেন চন্দ্রিমা। তাঁর যুক্তি, ১০০০ টাকা দামের জুতো-চপ্পলে জিএসটি বাড়লে, সাধারণ মানুষের উপরে বোঝা বাড়বে। সেই সঙ্গে সরকারি সংস্থার নির্মাণ কাজের বরাতে জিএসটির হার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ করারও বিরোধিতা করেন তিনি। কিন্তু এই বিষয়গুলি আলোচ্যসূচিতে না থাকায় আজ এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ১ জানুয়ারি থেকে জামাকাপড়ের দাম না বাড়লেও, জুতো-চপ্পলের ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধির সম্ভাবনা যথেষ্ট।
পশ্চিমবঙ্গের পরে সম্প্রতি গুজরাতের অর্থমন্ত্রীও জামাকাপড়ে করের হার বৃদ্ধির প্রস্তাবে আপত্তি তুলে কেন্দ্রকে চিঠি দেন। তার আগে শিল্পমহলও দরবার করেছিল কেন্দ্রের কাছে। গুজরাতের চিঠির ভিত্তিতেই তড়িঘড়ি আজ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, মূল পণ্যের থেকে কাঁচামালে বেশি জিএসটির সমস্যা মেটানো দরকার বলে সকলে একমত। কিন্তু শিল্পের সমস্যার কথা ভেবেই আপাতত সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকছে।
বিভিন্ন পণ্যে জিএসটির হার যুক্তিযুক্ত করার রাস্তা খুঁজতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের একটি গোষ্ঠী আগেই তৈরি করা হয়েছিল। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে চন্দ্রিমাও রয়েছেন। নির্মলা জানান, ওই কমিটি ফেব্রুয়ারিতে রিপোর্ট দেবে। তার পরে ফের জিএসটি পরিষদের বৈঠক ডাকা হবে। যদিও অনেকে মনে করছেন, ২০২২-এর শেষে গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত শিকেয় তোলা থাকবে।
শিল্পমহলের মতে, জিএসটির হার বাড়ানো হলে, তুলনামূলক ভাবে কম দামের তৈরি-জামাকাপড়ের দামই বাড়ত। কম আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। কারণ, এক হাজার টাকার বেশি দামের জামাকাপড়ে আগে থেকেই ১২ শতাংশ জিএসটি গুনতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক টোডি বলেন, “কোভিড সমস্যার মধ্যে করের হার বাড়ানোর প্রস্তাব কার্যকর না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। হোসিয়ারি-সহ তৈরি-জামাকাপড়কে করের সর্বনিম্ন ধাপে রাখা উচিত।’’
বণিকসভা আইসিসি-র ন্যাশনাল টেক্সটাইল কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় জৈন বলেন, ‘‘প্রায় তিন মাস আশঙ্কার মধ্যে কাটিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত যাতে পরেও কার্যকর না করা হয়, সেই আর্জি জানাব।’’
করের হার বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, বাংলা রেডিমেড গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ফকির বলেন, “তৈরি-জামাকাপড়ে করের হার যাতে ভবিষ্যতেও বাড়ানো না হয়, তার দাবি জানাব। কারণ হার বাড়লে, সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়বেন ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীরা।’’