উত্তরপ্রদেশের সেই সোনার খনি। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
জানা গিয়েছিল, টন টন সোনা রয়েছে উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রের খনিতে। সেখানকার এক জেলা আধিকারিক ভারতীয় ভূ-তত্ত্ব সর্বেক্ষণকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিলেন, দু’টি খনি মিলে কুবেরের ভাণ্ডার। সেখান থেকে মিলতে পারে ৩ হাজার ৩৫০ টন সোনা। স্বাভাবিক ভাবেই এমন খবরে শুক্রবার থেকেই তুফান বয়ে যায় গোটা দেশ জুড়ে। গোটা দেশেই যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে ৬২৬ টন সোনা, সেখানে সোনভদ্রের এই ৩ হাজার টন মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল সকলের। কিন্তু শনিবার সন্ধেয় সমস্ত হিসাব গুলিয়ে দিলেন খোদ জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই) অধিকর্তা। জানিয়ে দিলেন, সোনভদ্রে আকরিক সোনার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা সামান্যই।
সোনভদ্রে সোনার খনির খোঁজ মেলার ওই খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশ জুড়ে হইহই শুরু হয়ে যায়। শনিবার কলকাতায় জিএসআই-এর অধিকর্তা শ্রীধর জানান, শ্রীধর আরও জানান, খনিজ পদার্থ যেহেতু রাজ্যের অধীনে, তাই ওই স্বর্ণ আকর উত্তোলন করে তার থেকে সোনা তৈরির সিদ্ধান্ত রাজ্যের। তাঁর কথায়, ‘‘ওই খনি থেকে সোনা পেতে যা খরচ হবে, তা আদৌ ব্যবসায়িক দিক দিয়ে লাভজনক হবে না। তাই উত্তরপ্রদেশ সরকার ওই সোনা তুলতে শেষ পর্যন্ত কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’’
এর আগে ২০১৩ সালে। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের দৌণ্ডিয়া খেড়া এলাকায় মাটির তলায় প্রচুর সোনা রয়েছে বলে দাবি করে বসেছিলেন শোভন সরকার নামে এক ব্যক্তি। যদিও পরবর্তী কালে সেই দাবি ভুয়ো প্রমাণিত হয়। সোনভদ্রের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চড়তে থাকে প্রত্যাশার পারদ।
আরও পড়ুন: মেলানিয়ার সফর থেকে কেজরীবাল এবং সিসৌদিয়ার নাম বাদ, ক্ষুব্ধ আপ
এ দিন জিএসআই-এর তরফে একটি প্রেস বিবৃতিও জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে সোনভদ্রের সোন পাহাড়ি ও হরদি এলাকায় ৩ হাজার ৩৫০ টন সোনা পাওয়া যেতে পারে এমন কথা বলা হচ্ছে। এই তথ্য জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের রাজ্য অধিকর্তা। জিএসআই কোনও ভাবেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এই তথ্য ও খবরের সঙ্গে জড়িত নয়। উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রে এই পরিমাণ বিপুল সোনা সঞ্চিত আছে কিনা তা মূল্যায়ন করেনি জিএসআই। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সোনভদ্রে খননকার্য চালিয়ে আকরিক সোনার সন্ধান মিলেছে ঠিকই। কিন্তু ওই অঞ্চল থেকে বড়জোর ১৬০ কিলোগ্রাম সোনা পাওয়া যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সেই সোনার উত্তোলন ব্যবসায়িক ভাবেও লাভজনক নয় মোটেই। সে কারণে সেখান থেকে ১ গ্রাম সোনাও তোলা হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে তা নিয়েই।
জিএসআই-এর জারি করা প্রেস বিবৃতি।
শুক্রবার সোনভদ্রের মাইনিং অফিসার কেকে রাই দাবি করে বসেন, দীর্ঘ দিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়ে জিএসআই সম্প্রতি ওই স্বর্ণখনি দুটির হদিশ পেয়েছে। তিনি জানান, সোন পাহাড়ি ও হরদি ব্লক এলাকায় দু’টি স্বর্ণখনি পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকে কতটা সোনা উত্তোলন করা যেতে পারে তারও হিসাব দিয়েছিলেন গবেষকরা। তাঁদের ধারণা ছিল, সোন পাহাড়ির খনিতে ২ হাজার ৯৪৩.২৬ টন ও হরদি ব্লকের খনিতে প্রায় ৬৪৬.১৬ কেজি সোনা রয়েছে। সবমিলিয়ে যার বাজারমূল্য হতে পারে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। এ ছাড়াও ওই এলাকায় অন্য মূল্যবান খনিজ পদার্থও রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন কেকে রাই।
আরও পড়ুন: জাতীয়তাবাদ এবং ভারতমাতা কি জয় স্লোগানের অপব্যবহার হচ্ছে, বললেন মনমোহন
সোনভদ্রের ‘গুপ্তধন’-এর খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে চর্চা তুঙ্গে ওঠে। গোটা দেশ যখন সোনার স্বপ্নে মশগুল, ঠিক তখনই জিএসআই-এর ডিরেক্টর শ্রীধরের এমন বয়ান সাধারণ মানুষকে কল্পনার জগত থেকে এক ঝটকায় বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে এনেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে সারা দেশে ৬২৬ টন সোনা সংরক্ষিত রয়েছে। ইংরেজ শাসকদের হাত ধরেই সোনভদ্রে প্রথম সোনার খোঁজ শুরু হয়। ১৯৯২-৯৩ নাগাদ ভারত সরকার সেখানে ফের খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। তার পর গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে সোনার সন্ধান অব্যাহত ছিল সেখানে।