অশোক গহলৌতের প্রস্তাব তিন বার ফেরানোর পর অবশেষে বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে রাজি হলেন রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে আগামী ১৪ অগস্ট থেকে রাজস্থান বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে রাজি হলেন রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্র। এর আগে অবশ্য এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের প্রস্তাব তিনবার ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। আজ বেশি রাতে রাজভবন থেকে জানানো হয়, ‘আগামী ১৪ অগস্ট থেকে রাজস্থান বিধানসভার পঞ্চম অধিবেশন ডাকার জন্য মন্ত্রিসভার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন রাজ্যপাল।’
আজ সারাদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে গহলৌতের প্রস্তাব তৃতীয়বারের জন্য ফিরিয়ে দেন রাজ্যপাল। আগামী শুক্রবার থেকে অধিবেশন ডাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাজ্যপাল জানান, ২১ দিনের নোটিস না দিয়ে অতিমারির সময়ে এ ভাবে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা সম্ভব নয়। এর পরেই গহলৌত রাজভবনে যান। যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কী চান, তা জানতে রাজভবনে যাচ্ছি। বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে ২১ কিংবা ৩১, যত দিনের নোটিসই দেওয়ার কথাই তিনি বলুন না কেন, জিতব আমরাই।’’ পরে রাজ্যপালের কাছে একটি সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় রাজস্থান মন্ত্রিসভা। যেখানে ১৪ অগস্ট অধিবেশন ডাকতে বলা হয়। অর্থাৎ, প্রথমবারের প্রস্তাবের পর থেকে ২১ দিনের সময়সীমা মেনেই দিনটি ঠিক করা হয়। রাজ্যপাল শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাব মেনে নিলেন।
সচিন পাইলট শিবিরের চাপের মধ্যে দ্রুত বিধানসভার অধিবেশন ডেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে চাইছিলেন গহলৌত। ২০০ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় তাঁর দিকে ১০২ জনের সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করে রাজ্যপালকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। অধিবেশন ডাকার দাবিতে গত শুক্রবার রাজভবনের সামনে ৫ ঘণ্টা ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন গহলৌত। কিন্তু কোনও কিছুতেই চিঁড়ে ভেজেনি। একের পর এক প্রশ্ন তুলে গিয়েছেন রাজ্যপাল। কংগ্রেসের অভিযোগ, পাইলট শিবিরকে দল ভাঙানোর সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যুর হার অনেক কম, দাবি মন্ত্রকের
রাজ্যপালের বক্তব্য ছিল, অধিবেশন ডাকার বিপক্ষে নন তিনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী যদি আস্থাভোটের জন্য অধিবেশন চান, সে ক্ষেত্রে ২১ দিনের নোটিস প্রয়োজন। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘আপনি কি আস্থাভোটের জন্য অধিবেশন চাইছেন? সে কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করেননি। কিন্তু বাইরে বলছেন, আস্থাভোটের জন্য অধিবেশন ডাকা হোক।’’ রাজ্যপালের যুক্তি ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে এত কম সময়ের মধ্যে অধিবেশন ডাকা সম্ভব নয়।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পরেই রাজস্থানের রাজ্যপালকে আজ নিশানা করেছিল কংগ্রেস। টুইটারে দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা লিখেছেন, ‘‘২১ দিনের মধ্যে কোভিড যুদ্ধ জয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু করোনা মোকাবিলার রণনীতি ঠিক করতে বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে হলেও ২১ দিনের নোটিস দিতে হবে— এমন সিদ্ধান্ত অনৈতিক ও সংবিধান বিরোধী। সংবিধানই রাজ্যপালের দিশানির্দেশ করে থাকে, উল্টোটা হতে পারে না।’’ পরে অবশ্য অধিবেশন ডাকলেন রাজ্যপাল। তবে ১৪ অগস্ট পর্যন্ত সচিন শিবিরও সময় পেয়ে যাবে।
এরই মধ্যে রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সিপি জোশী আজ ফের সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছেন। দু’দিন আগেই শীর্ষ আদালতে পিটিশন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে সচিন শিবিরের বিধায়কদের বিরুদ্ধে তাঁর পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ দিয়ে রাজস্থান হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছেন স্পিকার। রাজ্যপালের সঙ্গেও দেখা করেন স্পিকার। আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই সিপি জোশীকে আজ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পাইলট।