গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন ছিলই। তার সঙ্গে গাঁধী পরিবারের সঙ্গে যুক্ত আরও দু’টি ট্রাস্টের বিরুদ্ধে এ বার তদন্তে নামছে কেন্দ্র। বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন, রাজীব গাঁধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল ট্রাস্টের বিরুদ্ধে আর্থিক গরমিলের অভিযোগের তদন্ত শুরু হচ্ছে। তদন্তে সমন্বয়ের জন্য ইতিমধ্যেই একটি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীগোষ্ঠীও গঠন করে ফেলেছে কেন্দ্র।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, আয়কর, বিদেশি অনুদান বা অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনকে ফাঁকি দিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তকারী দলের মাথায় থাকবেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের স্পেশাল ডিরেক্টর। মন্ত্রকের তরফে টুইট করেও এ কথা জানানো হয়েছে। অর্থাৎ দেশি বা বিদেশি অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রে গাঁধী পরিবারের এই তিন ট্রাস্টে কোনও গরমিল বা বেনিয়ম হয়েছে কি না, সেগুলিই তদন্তের আওতায় আসবে।
কংগ্রেস গোড়া থেকেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। আর এ দিনের তদন্তের সিদ্ধান্তের পর রাহুল গাঁধীর পাল্টা তোপ, সরকার ভয় পেয়ে যাঁকে খুশি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আনছে। রাহুল বলেন, ‘‘মিস্টার মোদী (নরেন্দ্র মোদী) মনে করেন, গোটা বিশ্বটাই ওঁর মতো। মনে করেন, প্রত্যেককেই ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করা যায়। তিনি কখনও বুঝবেন না যে, যাঁরা সত্যের জন্য লড়াই করেছেন তাঁরা কোনও মূল্যের জন্য করেনিনি। ভয় দেখিয়ে তাঁদের থামানো যায় না।’’
সরকারি অর্থ রাজীব গাঁধী মেমোরিয়াল ট্রাস্টে দেওয়ার অভিযোগে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব বিজেপি। অন্য দু’টি ট্রাস্টেও একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ তুলেছে শাসক শিবির। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ইউপিএ জমানায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদানের বন্দোবস্ত করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এ নিয়ে বলেছেন, ‘‘বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল। কিন্তু সেই তহবিল থেকে ইউপিএ জমানায় রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনকে অনুদান দেওয়া হয়েছে।’’ সরাসরি কংগ্রেস সভানেত্রীর দিকে তির ছুড়ে বিজেপি সভাপতির তোপ, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল বোর্ডের চেয়ারে কে ছিলেন— সনিয়া গাঁধী। রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের চেয়ারে কে— সনিয়া গাঁধী। অত্যন্ত নিন্দনীয়, নীতিহীন এবং স্বচ্ছতার তোয়াক্কা করা হয়নি।’’
আরও পড়ুন: দু’-তিনটি দুর্নীতিকেই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে, বললেন মমতা
ত্রাণ তহবিলের পাশাপাশি নতুন করে টেনে আনা হয়েছে ১৯৯১ সালের বাজেট বক্তৃতা। সেই সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিংহ। অভিযোগ, সেই বছর বাজেট বক্তৃতায় রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের জন্য পাঁচ বছরে ১০০ কোটি অনুদানের ঘোষণা করেছিলেন মনমোহন সিংহ। বিজেপির অভিযোগ, ‘‘১৯৯১ সালের বাজেট বক্তৃতার ১৬ নম্বর পাতার ৫৭ নম্বর প্যারায় মনমোহন সিংহ রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের জন্য ১০০ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা করেছিলেন। ২০ কোটি টাকা করে পর পর পাঁচ বছর।’’
আরও পড়ুন: টিকা না বেরলে দিনে প্রায় ৩ লক্ষ করোনায় আক্রান্ত হবেন ভারতে, বলছে গবেষণা
রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনের সভাপতি সনিয়া গাঁধী। এ ছাড়াও বোর্ডে রয়েছেন রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী, মনমোহন সিংহ ও পি চিদম্বরম। ফলে অভিযোগের আঙুল মূলত গাঁধী পরিবারের দিকে। এ নিয়ে সোনিয়া গাঁধী নিজে এখনও মুখ খোলেননি। তবে কংগ্রেসের তরফে বারবারই এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের নেতারা পাল্টা তোপ দেগে বলেছেন, করোনাভাইরাস, চিনের আগ্রাসন ঠেকাতে ব্যর্থ সরকার সাধারণ মানুষের নজর ঘোরাতেই এই সব অভিযোগ তুলছে।