রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কথা এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মুখে। —ফাইল চিত্র।
মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারতে কোনও জায়গা নেই। কোনও রকম রাখঢাক না করেই এ কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। তাঁর বক্তব্য, মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে জম্মুতে আশ্রয় নিয়েছেন বহু রোহিঙ্গা। কিন্তু তাঁদের এ দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। বরং ঝাড়াই-বাছাই করে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হবে শীঘ্রই।
শুক্রবার শ্রীনগরে সরকারি কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত তিন দিন ব্যাপী একটি অনুষ্ঠানে সংশোধিত নাগরকিত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে আলোচনা চলাকালীন এমন মন্তব্য করেন জিতেন্দ্র সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘সংসদে বিল পাশ হয়ে যাওয়ার দিন থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে সিএএ চালু হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে কোনও যদি, কিন্তুর ব্যাপার নেই। এ বার রোহিঙ্গাদের নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে সরকার।’’
মায়ানমারে ধর্মীয় নিপীড়ণের শিকার হয়েই দেশ ছেড়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা। তাঁদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ফাঁক ফোকর গলে ভারতেও ঢুকে পড়েছেন কিছু রোহিঙ্গা। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার পেরিয়ে তাঁদের একটা অংশ জম্মুতে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও দাবি করেন জিতেন্দ্র সিংহ।
কেন্দ্রীয় ওই মন্ত্রীর দাবি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে শুধুমাত্র পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়ণের শিকার হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, শিখ এবং পার্সিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাই বলা রয়েছে। মায়ানমার বা রোহিঙ্গাদের কোনও উল্লেখ নেই তাতে। তাই তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হবে। প্রয়োজনে তৈরি করা হবে বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্রও। কারণ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদর কোনও সুবিধা দেওয়ার কথা বলা নেই। পড়শি তিন দেশে ধর্মীয় নিপীড়ণের শিকার যে ছ’টি সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা তার মধ্যে পড়ে না।’’ বাংলা, বিহারের মতো একাধিক রাজ্য পেরিয়ে রোহিঙ্গারা জম্মু পৌঁছলেন কী ভাবে, তাঁদের টিকিটের খরচই বা কে জোগাল এবং এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মত জিতেন্দ্র সিংহের।
কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জম্মু এবং সাম্বা জেলায় এই মুহূর্তে ১৩ হাজার ৭০০ বিদেশি রয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বেশ কিছু বাংলাদেশি নাগরিকও। ২০১৬ সালের হিসাব দেখিয়ে বলা হয়েছে, তার আগের ৮ বছরেই এই সংখ্যাটা প্রায় ৬ হাজার বেড়েছে। মূলত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এসে ভিড় করাতেই সংখ্যাটা এত বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি বিজেপি, জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল প্যান্থার্স পার্টি (জেকেএনপিপি), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) মতো একাধিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের। তাই রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর দাবিতে সরব তারা।