সরকারটা তাঁর একার নয়, দলকে বোঝালেন মোদী

অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতরে জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রতি সেকেন্ডে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যাটি। দশ কোটি ছাপিয়ে বিজেপির সদস্য এগোচ্ছে এগারোর দিকে। বিশ্বের সব থেকে বড় দল হওয়ার অঘোষিত খেতাব। তবু স্বস্তিতে নেই নরেন্দ্র মোদী। কারণ, মাত্র দশ মাসেই অসন্তোষ ভিড় জমিয়েছে তাঁর ও সরকারের আশেপাশে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

অশোক রোডে বিজেপির সদর দফতরে জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রতি সেকেন্ডে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যাটি। দশ কোটি ছাপিয়ে বিজেপির সদস্য এগোচ্ছে এগারোর দিকে। বিশ্বের সব থেকে বড় দল হওয়ার অঘোষিত খেতাব। তবু স্বস্তিতে নেই নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

কারণ, মাত্র দশ মাসেই অসন্তোষ ভিড় জমিয়েছে তাঁর ও সরকারের আশেপাশে। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে মোদীর অতিকেন্দ্রিকতা নিয়ে। বিরোধীরা তাঁর সরকারকে গরিব-বিরোধী তকমা দিয়ে জনমত তৈরি করতে অনেকটাই সফল। অথচ মোদী সরকার যে সব কর্মসূচি এ পর্যন্ত ঘোষণা করেছে, মানুষের কাছে তা পৌঁছচ্ছে না সে ভাবে। মোদীর আশ্বাস ছিল ‘আচ্ছে দিন’ আসবে। কিন্তু মোটেই ‘আচ্ছে দিন’ মালুম হচ্ছে না আম আদমির। আর এ সবের কারণ খুঁজতে গিয়ে মোদী বুঝতে পারছেন, অসন্তোষ শুধু বাইরে নয়, ঘরেও রয়েছে। সরকারের ‘জনমুখী’ কর্মসূচির কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায় শুধু একা প্রধানমন্ত্রীর হতে পারে না। দলের সব নেতা-কর্মীকেই এর দায় নিতে হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না।

আর তাই কাল থেকে সংসদের অধিবেশন শুরুর এক দিন আগে মোদী দলের নেতাদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেছে নিলেন সাংসদদের কর্মশালার মঞ্চকে। সেখানেই তিনি ডাক দিলেন যৌথ তথা সম্মিলিত নেতৃত্বের। বোঝালেন, তাঁকে সামনে রেখে লোকসভায় যে বিজয় পতাকা উড়িয়েছে বিজেপি, সেই সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে সকলকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই সরকারটি তাঁর একার নয়, দলের সকলের। আর এর জন্যই এই কর্মশালায় পাশে বসালেন দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। যে আডবাণীকে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এক সময়ের মোদী-বিরোধী সুষমা স্বরাজেরও তারিফ করলেন কথা প্রসঙ্গে। ইয়েমেন থেকে ভারতীয়দের উদ্ধারের ঘটনায় বিদেশমন্ত্রী সুষমা ও বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের প্রশংসা করলেন।

Advertisement

একই সঙ্গে মনের কথাও জানালেন প্রধানমন্ত্রী। মনে করালেন, গোড়া থেকেই সরকার গরিবদের স্বার্থে কাজ করে আসছে। গরিবদের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করছে। কিন্তু সেগুলির কথা জোর গলায় মানুষের কাছে বলা হচ্ছে না বারবার। মোদীর কথায়, ‘‘আমি জানি আপনারা সকলেই ভাল কাজ করছেন। আমার কাছে রিপোর্ট আসে, সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পর আপনারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এক ফোঁটাও জিরোনোর সময় পাননি। তবে এটাও ঘটনা, সরকার যে একের পর এক ভাল পদক্ষেপ করছে, তার প্রতিধ্বনি সে ভাবে শোনা যাচ্ছে না।’’

বিজেপির এক নেতা মোদীর বক্তব্য ব্যাখ্যা করলেন এ ভাবে— সকলেই জানেন, এই সরকারের সর্বেসর্বা মোদীই। এত দিন তিনিই যাবতীয় দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে চলেছেন। দলের বাকিরা যখন দেখছেন, তাঁদের হাতে ক্ষমতা সীমিত, তখন হয়তো সরকারের ঢাক পেটানোর জন্য তাঁরাও তেমন আর উদ্যোগী হচ্ছেন না। তাই মোদী ঠিক যেমনটি চাইছেন, বাস্তবে তেমনটি ঘটছে না। আর বিরোধীরা সেই পরিসরটি দখল করে নিচ্ছে। সরকার-বিরোধিতার আবহ তৈরির কাজে লাগাচ্ছে সেটাকে। বিশেষ করে জমি বিল নিয়ে।

আর ‘ধারণা তৈরির’ এই লড়াইটা একা লড়ে যাওয়া সম্ভব নয় মোদীর পক্ষে। সম্প্রতি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে, মোদী-জাদু ফিকে হতে শুরু করেছে। সামনে যে ক’টি ভোট রয়েছে, তার সিংহভাগ রাজ্যে ক্ষমতা দখল করা বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতেই মোদী আজ সম্মিলিত নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। নিহিত অর্থটি আর কিছু নয়, সাফল্যের হকদার যদি সকলে হন, তা হলে ব্যর্থতার দায়ও সকলকে নিতে হবে। মোদী চান, সকলকে সঙ্গে নিয়েই সাফল্যের পথে এগোতে। জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেও এখনও মন থেকে ক্ষমতার সঙ্গে নিজেকে জুড়তে পারেননি। তাঁর সরকার নিরন্তর গরিব মানুষের জন্য কাজ করে চলেছে। সেই লক্ষ্যে নীতি প্রণয়ন করছে। তার মানে এই নয় যে, সরকারের কোনও ভুল হয় না। তবে সরকারের মনোভাবটি স্বচ্ছ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement