কাফিল খান।
আট মাস হয়ে গেল, জেলে রয়েছেন তিনি। জামিন মেলেনি। ‘‘মাঝেমাঝে নিজেকেই প্রশ্ন করি, আমি কি সত্যিই দোষী? মাথার মধ্যে ততক্ষণাৎ ধাক্কা মারে জবাবটা— না, না, এক্কেবারে না।’’ জেলে বসে একটি চিঠিতে এ কথা লিখেছেন গোরক্ষপুর শিশু-মৃত্যু কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, বিআরডি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক কাফিল খান। সেই চিঠিই হাতে এসেছে সংবাদমাধ্যমের।
গত বছর অগস্ট মাসের ঘটনা। এক রাতে ২৩টি শিশু অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার ফুরিয়ে গিয়েছিল। পরে ‘খুনের চেষ্টা’র অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কাফিলকে। যদিও ঘটনার দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। তার মধ্যেও হাসপাতালের অবস্থার কথা শুনে নিজেই কাছের হাসপাতাল, অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থাগুলি থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করেন। হাসপাতালের কর্মীরাই সে সময়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন সেই কথা। কাফিলের উদ্যোগে বেশ কিছু রোগী বেঁচেও গিয়েছিলেন। নভেম্বর মাসে হঠাৎই কাফিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা রুজু করা হয়। ৯ অভিযুক্তের মধ্যে তিনি ছাড়াও আরও দুই চিকিৎসক জামিন পাননি। মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ রাজীব মিশ্র ও পূর্ণিমা শুক্ল।
কিছু দিন আগে বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কাফিল-পত্নী শাবিস্তান খান জানান, হৃদরোগে ভুগছেন চিকিৎসক। চেহারাও ভেঙে গিয়েছে। দশ পাতার চিঠিতে কাফিল লিখেছেন, ‘‘নরকে বাস করছি। জেলের একটা কুঠুরির মধ্যে ১৫০ জন থাকে গাদাগাদি করে। মশা-মাছি ভর্তি। কোনও মতে খাবার গিলে নিই। শৌচাগারের দরজা ভাঙা, অর্ধনগ্ন হয়ে স্নান করতে হয়।’’
শেষ-পাতা: কাফিলের চিঠি।
আরও লিখেছেন— ‘‘২০১৭, ১০ অগস্টের রাত, যে মুহূর্তে হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেলাম, এক জন চিকিৎসক, এক জন বাবা, দেশের নাগরিক হিসেবে যা যা করা উচিত, সব করেছিলাম।’’ জানিয়েছেন, ২৫০টি সিলিন্ডারের ব্যবস্থা তিনি করতে পেরেছিলেন। সেই টাকাও তাঁর নিজের পকেট থেকেই গিয়েছিল। নিজের গাড়ি করেই সিলিন্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে।
কাফিল লিখেছেন, ১৩ অগস্ট হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে, ‘‘আপনিই কাফিল খান? আপনিই সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেছিলেন?’’ ‘হ্যাঁ’ বলতেই রেগে যান যোগী। বলেছিলেন, ‘‘এ সব করে হিরো হয়ে যাবেন ভেবেছেন? ব্যাপারটা দেখছি।’’ মিডিয়াতে খবরটা ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য খুব রেগে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, দাবি কাফিলের। এর পর তাঁর বাড়িতে পুলিশ হানা দিতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে চলতে থাকে ভয় দেখানো, হুমকি।
চিঠিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, পুষ্পা সেলস (অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা) ১৪ বার নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও কেন জেলাশাসক, মেডিক্যাল এডুকেশনের ডিজি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সচিব বকেয়া ৬৮ লাখ টাকা মেটানোর উদ্যোগ নিল না?
শেষে তিনি লিখেছেন, ‘‘অসহায়, হৃদয় ভেঙে যাওয়া বাবা/ স্বামী/ভাই/ পুত্র/ বন্ধু কাফিল খান।