রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
স্নাতক ছেলেরাও ‘ডেলিভারি বয়’ হিসেবে কাজ করছে। তাঁদের পাঁচ তলা, দশতলায় উঠে খাবার পৌঁছে দিতে হয়। মালবহনকারী গাধার মতো পরিচিতি। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত ‘পিক আওয়ার’। সে সময় যত জোরে বাইক ছোটানো যায়, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তা করতে হয়। বিকেল চারটে-পাঁচটা নাগাদ রাস্তার ধরে বসে খাবার খাওয়ার সময় মেলে।
বলতে বলতে গলা বুজে আসছিল হায়দরাবাদের ফিরোজ খানের। ২০১৭ থেকে ‘ডেলিভারি বয়’ হিসেবে কাজ করছেন। তখন জ্বালানির দাম ছিল লিটার প্রতি ৮০ টাকা। এখন বেড়ে ১১০ টাকা। ফিরোজ বলছিলেন, প্রতি দিন ১২-১৩ ঘণ্টা খাটার পরে হাজার টাকা মতো আয় হয়। তা থেকেও ২০০-৩০০ টাকা বাইকের জ্বালানিতে চলে যায়। এক-একটি ডেলিভারিতে আগে ৪০ টাকা মিলত। এখন পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ২০ টাকা মেলে। দৈনিক মজুরি। না রয়েছে বিমা, না প্রভিডেন্ট ফান্ড। হায়দরাবাদের মহিলা সাফাই কর্মী বলছিলেন, ১১ বছর
হয়ে গিয়েছে কাজ করতে করতে। এখনও স্থায়ী নিয়োগ হয়নি। হয়তো এই সভায় এসেছেন বলেই কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন সকালে জুবিলি হিলসে রাহুল গান্ধী ‘ডেলিভারি বয়’ বা গিগ-কর্মী, সাফাইকর্মী, অটোচালকদের সঙ্গে কথা বললেন। প্রতিশ্রুতি দিলেন, কংগ্রেস তেলঙ্গানায় ক্ষমতায় এলে রাজস্থানের মতো গিগ-কর্মী বা ডেলিভারি বয়দের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য পৃথক আইন হবে। প্রতিটি বুকিংয়ের থেকে কিছু অর্থ কর্মীদের বিমা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জমা হবে।
কংগ্রেসের পরিকল্পনা ছিল, তেলঙ্গানায় প্রচারে শেষ দিনে সনিয়া গান্ধীকে নিয়ে যাওয়া হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা গঠনের পিছনে সনিয়ার প্রধান ভূমিকার জন্য রাজ্যের বহু মানুষ তাঁকে ‘সনিয়া আম্মা’ বলে ডাকেন। সেই আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হবে। কিন্তু তাঁর শারীরিক অসুস্থতার জন্য সনিয়া যেতে পারেননি, ভিডিয়ো বার্তায় তেলঙ্গানার মানুষকে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আপনারা সনিয়া আম্মা বলে যে শ্রদ্ধা, সম্মান জানিয়েছেন, তার জন্য চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’’
সনিয়ার অনুস্থিতিতে আজ রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা জুটি বেঁধে তেলঙ্গানার শেষ দিন প্রচার করেছেন। প্রথমে জনসভা, তার পরে রোড-শো। রাহুল রোড-শোয়ের সময় চকোলেট বিলি করেছেন। তার আগে জনসভায় একইসঙ্গে বিআরএস প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এবং এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসিকে নিশানা করেছেন তিনি। রাহুলের অভিযোগ, বিআরএস মহারাষ্ট্র, অসম, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, গোয়ায় গিয়ে বিজেপিকে সাহায্য করে কংগ্রেসের ক্ষতি করছে। দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে হলে তেলঙ্গানায় কেসিআর-কে হারাতে হবে। রাহুল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমার নামে ২৪টা মামলা, ওয়েইসির নামে কোনও মামলা নেই। আমার পিছনে ইডি, সিবিআই, আয়কর সবাই পড়ে রয়েছে। কিন্তু ওয়েইসি-র বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত সংস্থা নেমেছে? কারণ, উনি মোদীকে সাহায্য করেন।’’