শান্তিবনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সমাধিস্থলে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফার সিদ্ধান্তেই অনড় রাহুল গাঁধী। কার্যত তাঁর বিকল্পের সন্ধানও শুরু করে দিল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। বাতিল করা হয়েছে তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি। এমনকি, দলের নবনির্বাচিত সাংসদদের সঙ্গে দেখা করতেও রাজি হননি রাহুল। দুই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল এবং কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দিষ্ট করে তাঁর ইস্তফার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। দলের একটি শীর্ষ সূত্রে দাবি, নতুন নেতা খোঁজার জন্যও দুই নেতাকে রাহুল স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর শনিবার দলের কার্যকরী কমিটির বৈঠকেই কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন রাহুল। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটি তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। বরং দলের দুঃসময়ে এবং লোকসভা ভোটে মোদী তথা বিজেপিকে তিনিই একমাত্র চাপে ফেলতে পেরেছেন বলে রাহুলকেই দলের সভাপতি পদে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ওয়ার্কিং কমিটির নেতা-নেত্রীরা। এমনকি, সনিয়া গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কাও তাঁকে বুঝিয়ে তখনকার মতো নিরস্ত করেন।
সে দিনের মতো বিষয়টি মিটে গেলেও পরে ফের কঠোর অবস্থান নেন রাহুল গাঁধী। সূত্রের খবর, সোনিয়া-প্রিয়ঙ্কা আরও এক দফা বুঝিয়েও রাজি করাতে পারেননি এবং তাঁরাও শেষ পর্যন্ত রাহুলের সিদ্ধান্তেই সায় দিয়েছেন। অসংখ্য নেতা-নেত্রী ফোনে বা দেখা করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এই দু’দিনে। কিন্তু দলের একাধিক সূত্রে খবর, রাহুল আর কোনও ভাবেই কংগ্রেস সভাপতির পদে ফিরতে রাজি হননি। কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সাংসদরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার আর্জি নিয়ে ফোন করেছিলেন। কিন্তু রাহুল কারও সঙ্গেই সাক্ষাতে রাজি হননি। তাঁর সমস্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট, বৈঠক এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি সব কিছুই বাতিল করেছে দল। সেটাও যে রাহুলের নির্দেশেই হয়েছে, দলের অন্দরমহলে খবর তেমনই।
রাহুলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, পদ ছাড়ার ব্যাপারে আর কোনও দ্বিমতই নেই। তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শুধু নতুন কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন করা পর্যন্ত দায়িত্বভার সামলাবেন তিনি। সেই সময়টুকু দলকে দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে এই সময়ের মধ্যেও দলের সাংগঠনিক বা অন্য কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেবেন না বলেই সূ্ত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত কাজে উত্তরপ্রদেশে, বাড়তি সময় চাইলেন রাজীব, ফের সমন পাঠানোর প্রস্তুতি সিবিআইয়ের
আরও পডু়ন: অঙ্ক হেরেছে, ভোটে জয় হয়েছে রসায়নের, নিজের কেন্দ্র বারাণসী সফরে গিয়ে বললেন মোদী
রাহুলের এই অনমনীয় অবস্থান বুঝেই তলে তলে পরবর্তী পদক্ষেপও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর। পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন, তা নিয়েও দলের অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, সিডব্লিউসি-র পরবর্তী বৈঠকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে রাহুলের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করা হতে পারে।
অন্য দিকে শনিবারের কার্যকরী বৈঠকে ইস্তফার ঘোষণার পর এই প্রথম টুইট করলেন রাহুল। সোমবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যু দিবসে শান্তিবনে গিয়ে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান রাহুল। ছিলেন সোনিয়া গাঁধীও। পাশাপাশি টুইটারেও শ্রদ্ধা জানিয়ে রাহুল লিখেছেন, ‘একটি শক্তিশালী, স্বাধীন এবং আধুনিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দেশকে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর মৃত্যু দিবসে চলুন আমরা জওহরলাল নেহরুর অবদানকে স্বীকার করি। তাঁর সেই অবদানের জন্যই ভারতবর্ষে ৭০ বছর ধরে গণতন্ত্র জীবিত।