প্রতীকী ছবি।
শিশুটি গোপন জবানবন্দিতে কী বলেছে, তার উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে জিডি বিড়লা মামলার গতিপ্রকৃতি।
সম্প্রতি ওই স্কুলের এক শিশুর উপরে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে স্কুলেরই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষার পরে নির্দিষ্ট যৌন অত্যাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গত সোমবারেই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দেয় শিশুটি। আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্রের কথায়, ‘‘বিচারকের সামনে শিশুটির এই বয়ানই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সঙ্গে কথা বলে বিচারক যদি যৌন নিগ্রহের সামান্যতম আভাসও পান, তা হলে মামলার গতিপ্রকৃতি সেই অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।’’
পকসো বা প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস আইনে মামলা দায়ের হয়েছে এই ঘটনায়। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ধর্ষণ বা সোডোমির মতো অভিযোগই শুধু নয়, পকসো আইনের পরিধি অনেকটাই বিস্তৃত। পকসো-র আওতায় এমন অনেক ধারা রয়েছে যেখানে সরাসরি শারীরিক নির্যাতন না হলেও মামলা হতে পারে। শিশুর সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার, খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তার গায়ে হাত দেওয়া-সহ অনেক ক্ষেত্রেই পকসো-র ৭ নম্বর ধারায় মামলা হয়। এমনকী শিশুর প্রতি খারাপ কথা, অঙ্গভঙ্গির অভিযোগেও পকসো-র আওতায় মামলা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মেডিক্যাল রিপোর্টের গুরুত্ব সে ভাবে থাকে না। ধর্ষণ এবং সোডোমির মতো অভিযোগ উঠলে, পকসো-র ৩ থেকে ৫ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়। সেখানে মেডিক্যাল রিপোর্টের ভূমিকা থাকে।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডলের কথায়, ‘‘পকসো আইনে খারাপ ভাবে ছোঁওয়া বা অঙ্গভঙ্গি করাও অপরাধ। অপরাধ প্রমাণিত হলে সাজাও হয়। পকসো-র বেশির ভাগ ধারাতেই অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হয় যে, তিনি অপরাধ করেননি।’’ আইনজীবীদের মতে, খুবই শক্ত আইন এই পকসো। অভিযোগ উঠলেই গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তের সামাজিক সম্মান বিপন্ন হয়। সে ক্ষেত্রে ভুয়ো অভিযোগ হলে রক্ষাকবচ কী? হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ হয়েছে— এমনটা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির কথা বলা রয়েছে পকসো আইনে।’’
কিন্তু শিশুরা কি গুছিয়ে বলতে পারে সব কথা? জি ডি বিড়লা মামলাতেও এ প্রশ্ন উঠেছে যে, ঘটনার এত দিন পরে বিচারকের সামনে বসে শিশুটি আদৌ কি কিছু বলতে পারবে! চার বছরের যে শিশুর উপর দিয়ে এত ঝড় গিয়েছে, তার কাছ থেকে আসল ঘটনা কতটা বার করে আনা যাবে তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণও এখানে জরুরি হতে পারে। ওই স্কুলের অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে যদি জানা যায় যে, এর আগেও ওই দুই অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে বেশ কয়েক জন ছাত্রীর ‘অস্বস্তি’ তৈরি হয়েছে, তা অভিযুক্তদের বিপক্ষে যেতে পারে।’’