বরফে ঢাকা পাহাড়। খরস্রোতা জলরাশি। নিস্তব্ধতার মধ্যে প্রকৃতির নিজস্ব শব্দ। হিমাচল বলতে চোখে ভাসে এই সব দৃশ্যকল্প। পাহাড়ি শহরগুলির সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছরই এখানে বহু পর্যটক আসেন। এ বার শীতের মরসুম শুরু হওয়ার আগে তুষারপাত দেখা গেল হিমাচলের পার্বত্য এলাকায়।
ইতিমধ্যেই দুধের মতো সাদা বরফে ঢেকে গিয়েছে লাহুল-স্পিতি-র বড় অংশ। বরফ ছড়িয়ে রয়েছে রাস্তার উপর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ঢেকে গিয়েছে বরফের চাদরে। হঠাৎ তুষারপাত পেয়ে বেজায় খুশি ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। শীতে লাহুল-স্পিতির তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নীচে— ৪ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে। শীতের আগে এমন তুষারপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত।
রবিবার থেকে লাহুল-স্পিতিতে তুষারপাত শুরু হয়েছে। বড়লাচা পাসে তুষারপাতের জেরে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল মানালি-লেহ্ সড়ক। লাহুল-স্পিতির কুনজুম পাসে বরফ জমে থাকার কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গ্রামফু-কাজা সড়কে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত লাহুল-স্পিতি। যাঁরা ট্রেকিং বা পায়ে হেঁটে বেড়াতে করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এটি পছন্দের জায়গা। অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি যাঁরা বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখেন, তাঁদের কাছেও জায়গাটি স্বর্গের থেকেও কিছু কম নয়।
লাহুল-স্পিতি দু’ভাবে যাওয়া যেতে পারে। একটি রাস্তা শিমলা হয়ে। রোটাং পাস হয়ে অন্যটি। রোটাং হয়ে লাহুল-স্পিতিতে পৌঁছতে গেলে যেতে হয় গ্রীষ্ম কালে। অন্য দিকে, শিমলা দিয়ে ঠান্ডার সময়ও যাওয়া যায়।
লাহুল-স্পিতি যাওয়ার পথেই ‘কিন্নরের রানি’ কল্পা। কল্পা শতদ্রু নদীর ধারে ছোট্ট একটি শহর। পাশেই কিন্নর-কৈলাস পাহাড়। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত চণ্ডীকা দেবীর মন্দির। এ ছাড়া আছে নারায়ণ-নাগিনী মন্দির, হু-বুন-লান-কার মঠ।
শতদ্রু ও স্পিতি নদীর মিলনস্থলের কাছেই নাকো লেক, যা পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। নাকোর পাশে আবার শ্রীখণ্ড পাহাড়। রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির, ভীমকালী মন্দির।
নাকো থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরত্বে ভারতের প্রাচীনতম টাবোর গুহা। নাকো থেকে কাজা যাওয়া পথে তা দেখা যায়। পাশে রয়েছে বৌদ্ধমঠ। এ সবই এখন বরফে ঢাকা।
স্পিতি উপত্যকায় রয়েছে পাহাড় ঘেরা স্বচ্ছ, নীলচে সবুজ চন্দ্রতাল হ্রদ। এর উচ্চতা ১৪ হাজার ১০০ মিটার। চাঁদের আকৃতির সঙ্গে প্রভূত মিল এই হ্রদের।
লাহুল-স্পিতি পার হয়ে যেতে হয় বিশ্বের উচ্চতম গ্রাম হিক্কিমে। হিমালয়ের পাদদেশে হিক্কিম। ওই গ্রামের লোকসংখ্যা মেরেকেটে ২০০-৩০০। স্কুল একটি রয়েছে, তবে তার পড়ুয়া সংখ্যা ৫-১০। রয়েছে এক হাজার বছরেরও বেশি পুরনো বৌদ্ধমঠ।