ফাইল চিত্র।
ভারতকে রাফাল যুদ্ধবিমান বিক্রির চুক্তিতে অস্ত্র দালাল সুষেণমোহন গুপ্তকে কয়েক কোটি ইউরো ঘুষ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েও ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থা চুপ করে বসেছিল বলে দাবি করল একটি ফরাসি সংবাদমাধ্যম।
রাফাল প্রস্তুতকারক সংস্থা দাসো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে রাফাল বিমান সরবরাহের চুক্তি হয়েছে। স্বচ্ছতা বজায় রেখেই চুক্তি কার্যকর করা হচ্ছে। দাসো সব সময়েই আন্তর্জাতিক ও সংশ্লিষ্ট দেশের দুর্নীতি-বিরোধী আইন মেনে চলে।
ইউপিএ জমানায় অগুস্তাওয়েস্টল্যান্ড সংস্থার কাছ থেকে চপার কেনার চুক্তিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সুষেণ গুপ্তকে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ গ্রেফতার করে ইডি। পরে জামিন পান তিনি। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির দাবি, বেশ কয়েকটি ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে ‘সফটওয়্যার কনসালটেন্সি’-র নামে অগুস্তার কাছ থেকে কোটি কোটি ইউরো ঘুষ নিয়েছিলেন সুষেণ। সেই তদন্ত করতে গিয়েই অন্য প্রতিরক্ষা চুক্তি থেকেও সুষেনের ঘুষ নেওয়ার কথা জানতে পারে ইডি। ফরাসি সংবাদমাধ্যমের দাবি, একই ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে একই পদ্ধতিতেই রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তিকে প্রভাবিত করার জন্য সুষেণকে ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। অগুস্তা মামলায় সুষেণের বিরুদ্ধে চার্জশিটে ইডি জানায়, অন্য চুক্তি থেকে পাওয়া ঘুষ বা কাটমানি এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাই তারা এ নিয়ে আলাদা ভাবে তদন্ত করবে। দু’বছর বাদেও সেই তদন্ত শুরু হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির আরও দাবি, রাফাল প্রস্তুতকারক সংস্থা দাসোর সঙ্গে ভারতের দর কষাকষির সময়ে ভারত সরকারের গোপন নথিও জোগাড় করেছিল সুষেণ। তবে তা সে কী ভাবে হাতে পেয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির দাবি, দাসো ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থা এমবিডিএ দুই সরকারের মধ্যে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত বাদ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল। ওই শর্ত অনুযায়ী, যদি বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থার তরফে কোনও মধ্যস্থতাকারীকে টাকা দিয়ে চুক্তিতে প্রভাব খাটানোর বা ভারত সরকারের কাছে ওই সংস্থাকে সুপারিশ করানোর প্রমাণ মিলত তবে ভারত চুক্তি বাতিল করতে পারত।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বিমানের অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তিতে ওই দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত কার্যকর হবে না বলে জানান ফরাসি প্রতিনিধিরা। কিন্তু ভারতীয় প্রতিনিধিরা রাজি হননি। ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রাফাল বিমান সরবরাহ করার চুক্তিতেও ফরাসি প্রতিনিধিরা দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত কার্যকর করতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের নেতৃত্বে এক বৈঠকে ওই শর্ত কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত মেনে নেয় ভারত সরকার। এক প্রশ্নের জবাবে ফরাসি সরকার ওই সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছে, এই তথ্য ঠিক নয়। চুক্তি অনুযায়ী ফরাসি সরকারের ভূমিকা ছিল কেবল গুণমান মেনে রাফাল বিমান সরবরাহ নিশ্চিত করার।
রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে লোকসভা ভোটের আগেই সরব হয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। তবে তখন সুপ্রিম কোর্ট এ নিয়ে তদন্তের আর্জি খারিজ করে দেয়। ফরাসি সংবাদমাধ্যমে নয়া তথ্য সামনে আসার পরে ফের তদন্ত চেয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম।