তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উঠে এল ১৯৯৩ সালে এবিপি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের করা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি মামলার প্রসঙ্গ। ওই মামলার রায় দিতে গিয়ে গত বছর সুপ্রিম কোর্ট অশালীনতা ও নৈতিকতার কিছু মাপকাঠি নির্ধারণ করেছিল। কেন্দ্রের আর্জি ছিল, সেই মাপকাঠির নিরিখেই ৬৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু এ দিন সেই আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
জার্মান টেনিস তারকা বরিস বেকার ও তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেত্রী-বান্ধবী বারবারা ফেলটুসের নগ্ন ছবি ছাপার ‘অপরাধে’ এবিপি সংস্থার প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার ও মুদ্রক-প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একটি জার্মান পত্রিকায় প্রকাশিত ওই ছবি পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল এবিপি সংস্থা প্রকাশিত ‘স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকায়। গত বছরের গোড়ায় সেই মামলা খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, এই ছবি অশ্লীল তো নয়ই বরং জাতি ও বর্ণবিদ্বেষ দূর করার লক্ষ্যে একটা বার্তা।
একই সঙ্গে শালীনতা ও নৈতিকতা নির্ধারণে দু’টি শর্তের কথা তার রায়ে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারা বলে, শালীনতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন সেখানেই উঠবে, যদি ‘সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ্যে যৌন ইচ্ছা জাগ্রত করার চেষ্টা করে, অধঃপতিত মনের পরিচয় দেয় এবং যাঁরা সেই তথ্য দেখবেন তাঁদের মধ্যে যৌন ইচ্ছা উদ্রেকের লক্ষ্যে প্রচারিত হয়।’ শীর্ষ আদালত আরও বলে, ‘যে ব্যক্তির ছবি ছাপা হয়েছে, তাঁর শালীনতা নষ্ট করার মতো প্রেক্ষাপট বা প্রসঙ্গ থাকলেও’ শালীনতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। কিন্তু বরিস বেকার ও তাঁর বান্ধবীর ছবি ছেপে এই দুই শর্তের কোনওটিই লঙ্ঘন করা হয়নি, জানিয়ে দেন বিচারপতিরা।
কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, নৈতিকতা ও শালীনতার প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া এই দুই শর্ত রক্ষা করতেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না, সেটাই বিচার্য হওয়া উচিত। সংবিধানের ১৯(২) ধারায় বলা আছে কোন কোন ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপরে যুক্তিগ্রাহ্য নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করা যাবে। সেই তালিকায় শালীনতা এবং নৈতিকতার প্রসঙ্গও রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এ দিন তার রায়ে বলেছে, ‘৬৬এ ধারা মোতাবেক যা অশালীন বা অসন্তোষজনক তা আদতে হয়তো অশালীনই নয়। বস্তুত, ৬৬এ ধারায় অশালীন শব্দটাই নেই।’