প্রতীকী ছবি।
গড়ে ২৯টি বাচ্চা রোজ হারিয়ে যায় মধ্যপ্রদেশে। রাজস্থানে রোজ ১৪ জন। ২০২১ সালের ছবিটা এমনই ছিল বলে নিজেদের রিপোর্টে জানিয়েছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর তথ্য উদ্ধৃত করে সংস্থাটি জানিয়েছে, ওই দুই রাজ্যেই রোজ গড়ে যত বাচ্চা হারিয়ে যায়, তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির আশঙ্কা, হারিয়ে যাওয়া এই শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ছেলেদের একটা বড় অংশকে হয়তো শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। মেয়েদের গৃহসহায়িকার কাজে এমনকি যৌনবৃত্তিতে নামানোর আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
শুধু রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ নয়, নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশেও। রিপোর্টে দেওয়া গত বছরের খতিয়ান বলছে, দিল্লির আটটি পুলিশ জেলায় প্রতি দিন গড়ে হারিয়ে যায় অন্তত পাঁচটি বাচ্চা। উত্তরপ্রদেশের ৭৫টি জেলার মধ্যে মাত্র ৫৮টির তথ্য নিলেও দেখা যাচ্ছে, সেখানে এই দৈনিক নিখোঁজের গড় দাঁড়িয়েছে আটে। এই চারটি রাজ্য নিয়েই বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর ২০২০ সালের পরিসংখ্যান এবং তথ্যের অধিকার আইনে রাজ্য সরকারগুলির থেকে পাওয়া ২০২১ সালের তথ্য তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, এই একটি বছরের মধ্যেই মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে হারিয়ে যাওয়া বাচ্চার সংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ২৬ শতাংশ এবং ৪১ শতাংশ। ২০২০ সালে মধ্যপ্রদেশে ৮৭৫১টি বাচ্চা নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছিল। ২০২১ সালে সেটিই হয়েছে ১০,৬৪৮। নিখোঁজের সংখ্যার নিরিখে প্রথম পাঁচে ইন্দোর, ভোপাল, ধার, জব্বলপুর এবং রেওয়া জেলা। একই ভাবে রাজস্থানে ২০২০-তে যেখানে ৩১৭৯টি বাচ্চা নিখোঁজ হয়েছিল, সেখানে ২০২১-এ সংখ্যাটা হয়েছে ৫৩৫৪। উত্তরপ্রদেশের ৫৮টি জেলার তথ্য বলছে, সেখানে গত বছরহারিয়ে গিয়েছে ২৯৯৮টি বাচ্চা। এদের প্রায় ৮৮.৯ শতাংশের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এই তালিকার প্রথম পাঁচে রয়েছে লখনউ, মোরাদাবাদ, কানপুর নগর, মিরাট এবং মহারাজগঞ্জ জেলা। দিল্লিতে ২০২১ সালে মোট যে ১৬৪১টি বাচ্চার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাদের মধ্যেও প্রায় ৮৫ শতাংশের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছর। উত্তর-পূর্বদিল্লি থেকেই অভিযোগ এসেছে সব চেয়ে বেশি।
আরও একটি উদ্বেগজনক দিক হল, দেশ জুড়ে নিখোঁজ হওয়া কন্যাসন্তানের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকা। রিপোর্টটিতে দেওয়া ২০১৬ সালের হিসেব বলছে, ওই বছরে সারা দেশে নিখোঁজ শিশুদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ছিল মেয়ে। ২০২০ সালে তা বেড়ে ৭৭ শতাংশ হয়েছে। যে চারটি রাজ্য নিয়ে রিপোর্টে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটিতেই এই প্রবণতা স্পষ্ট। রিপোর্ট বলছে, মধ্যপ্রদেশে রোজ গড়ে নিখোঁজ ২৯টি বাচ্চার মধ্যে ২৪টিই মেয়ে। উত্তরপ্রদেশের ৫৮টি জেলায় রোজ নিখোঁজ আটটি বাচ্চার মধ্যে ছ’জন মেয়ে। রাজস্থানের রোজ নিখোঁজ হওয়া ১৪টি বাচ্চার মধ্যে থাকে ১২টি মেয়ে। এ ক্ষেত্রে রাজস্থানের গত বছরের পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান দেখা যেতে পারে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নিখোঁজ ৫৩৫৪টি বাচ্চার মধ্যে ছিল ৪৪৬৮টি মেয়ে এবং ৮৮৬টি ছেলে। একই ভাবে উত্তরপ্রদেশের ৫৮ জেলায় নিখোঁজ ২৯৯৮ জনের মধ্যে রয়েছে ২১৬৩টি মেয়ে ও ৮৩৫টি ছেলে। নিখোঁজদের মধ্যে যারা পাচারই হয়ে গিয়েছিল বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালে তেমন শিশু-কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ২২২২। এর মধ্যে রাজস্থানের ছেলেমেয়েদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি— ৮১৫।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির আঞ্চলিক অধিকর্তা সোহা মৈত্র জানান, নিখোঁজদের বাচ্চাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে যে ভাবে চোখে পড়ার মতো বেশি রয়েছে, তা উদ্বেগজনক। চারটি রাজ্যেই এই একই প্রবণতা। বিশেষত মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে তা সবচেয়ে বেশি। তাঁর মতে, গৃহসহায়িকার কাজের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এমনকি যৌন পেশায় নামানোর সঙ্গেও মেয়েদের এ ভাবে নিখোঁজ হওয়ার যোগ থাকতে পারে। অনেকে আবার সংসারে অবজ্ঞা, অবহেলা বা হিংসার শিকার হয়েও বাড়ি ছেড়ে পালায়। সোহা বলেন, ‘‘অতিমারির জেরে অসংগঠিত ক্ষেত্রে সস্তায় শ্রমিকের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। চাহিদা বেড়েছে শিশুশ্রমের। ছেলেদের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও তাই একই রকম চিন্তার।’’